জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) আদলে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (বিএইচআরসি) গড়ে তুলে দেশে-বিদেশে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। এ চক্রের মূলহোতা বিএইচআরসির সেক্রেটারি জেনারেল নারায়ণগঞ্জের রূপপুর থানার দাউদপুরের সাইফুল ইসলাম দিলদার। নিজ গাড়িতে ব্যবহার করেন এনএইচআরসির লোগোর আদলে তৈরি করা লোগো।
অভিযোগ উঠেছে, প্রটোকল চেয়ে ডিসি-এসপিদেরও ধমক দেন সাইফুল। ‘কমিশন’ শব্দটি ব্যবহারের ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও
এনএইচআরসির আদলে তৈরি করেছেন ওয়েবসাইট। এ প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে করেন নানা ধরনের প্রতারণা। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও নামের আগে ব্যবহার করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এমন সব অভিযোগের পাহাড় নিয়ে হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। দায়ের করেছেন আদালত অবমাননার মামলা। এর পরও থামানো যাচ্ছিল না চক্রটিকে। অবশেষে গত রোববার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে বেঞ্চ সহকারি মো. আক্তারুজ্জামান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে প্রতারণা, মানব পাচার, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের।
মামলার পর গতকাল রাতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন সাইফুল ইসলামসহ সাতজন। আজ তাদের আদালতে হাজির করবে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন রুহুল আমিন, বাদল মোল্লা, তাজউদ্দীন, কাইয়ুম, সূচী আফরিন ও আটক আইনের সংঘাতে আসা এক শিশু।
পুলিশ জানায়, তাদের গ্রেপ্তারের সময় বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সেক্রেটারি জেনারেলের ২০ ভিজিটিং কার্ড, ৯৬টি আইডি কার্ড, ১০টি গাইডলাইন বই, কর্মকর্তা কর্মচারীর তালিকা, বিভিন্ন ধরনের ১১টি সিল, ১৫টি সদস্য ফরম, ২০টি ক্যালেন্ডার, একটি মানি রিসিট বই, তিনটি সিপিইউ, এ সংস্থার লোগো ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক বলেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নামে একটি বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইন অনুযায়ী মানবাধিকার ‘কমিশন’ হিসেবে কমিশন শব্দটি শুধু জাতীয় মানবাধিকার কমিশন লিখতে পারবে। সেই আলোকে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন’ নামীয় সংস্থাটির বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশনের রিট করলে হাইকোর্ট থেকে ‘কমিশন’ শব্দটি বাদ দেওয়ার জন্য আসামি সাইফুল ইসলাম দিলদারকে নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি নির্দেশনা অমান্য করে বিভিন্ন ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন।
ডিসি বলেন, সংস্থাটির নামের শেষে ‘কমিশন’ ও সংক্ষেপে ‘বিএইচআরসি’ শব্দ দুটি কোথাও ব্যবহার করতে পারবে না বলে আদালত নির্দেশ দিলেও তা অমান্য করে তারা। সেইসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আদলে ওয়েবসাইট তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ছাড়া তাদের ফেসবুক ও ওয়েবসাইটে সদস্যপদ সংগ্রহসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর প্রচার চালিয়ে প্রতারণা করছিলেন সাইফুল ইসলাম।
মন্তব্য করুন