পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন মো. মনিরুল ইসলাম ও সাব্বির আহমেদ ওরফে মেহেদী। কয়েক বছর আগে দুজন পুলিশ বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন। এরপর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে শুরু করেন ছিনতাই। এতে পুলিশের হ্যান্ডকাফ ও ভাড়ায় চালিত গাড়ি ব্যবহার করতেন তারা। ছিনতাইয়ের ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল থানায় করা মামলায় চাকরিচ্যুত দুই পুলিশ কনস্টেবলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিটে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক মো. নাজমুল্লাহ আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেছেন।
এ বিষয়ে আদালতের মতিঝিল থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শাহ আলম কালবেলাকে বলেন, ‘ছিনতাইয়ের ঘটনায় চাকরিচ্যুত দুই কনস্টেবলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় সিএমএম আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—গাড়িচালক মো. সাদ্দাম হোসাইন, চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল মো. মনিরুল ইসলাম ও সাব্বির আহমেদ ওরফে মেহেদী। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন। এ মামলার অভিযোগ প্রমাণে ১৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, মনিরুল ইসলাম পুলিশ কনস্টেবল পদে খাগড়াছড়ি পুলিশ লাইনে কর্মরত থাকাকালে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। এরপর তিনি পুলিশ বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন। সাব্বির আহমেদ নৌ পুলিশে কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। সিডিএমএস পর্যালোচনায় এবং থানার রেকর্ড যাচাইয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়। তিনি বাংলাদেশ নৌ পুলিশ থেকে চাকরিচ্যুত হন। পরে তার বিরুদ্ধে মতিঝিল ও দারুস সালাম থানায় পৃথক আরও দুটি মামলা হয়।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা মামলার ঘটনার সময় নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মামলার ভিকটিম রিয়াজ হোসেনকে জোরপূর্বক হ্যান্ডকাফ পরিয়ে মারধর করে দস্যুতার ঘটনাটি ঘটান। এ মামলার ঘটনায় জব্দকৃত গাড়িটি আসামি মনিরুল ও সাব্বির যাত্রাবাড়ী থানাধীন নান্দনিক মোহাম্মদিয়া টাওয়ার থেকে নিয়ে বের হন। এই গাড়িটি দিয়েই তারা এ মামলার ঘটনাটি ঘটান। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে যোগাযোগ করতেন তারা। গাড়িটি জোসনা নামে একজন মহিলার কাছ থেকে ভাড়ায় নিয়ে আসামি সাব্বির চালাতেন বলে জানা যায়। মামলার ঘটনাটি সার্বিক তদন্তে, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জব্দকৃত আলামত, তদন্তকালীন প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় আসামিদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী মো. রিয়াজ হোসেন ঢাকায় মার্কেটিং অফিসার হিসেবে চাকরি করেন। গত ১৬ জানুয়ারি তিনি সদরঘাটে কাজ সেরে রিকশায় মতিঝিল আসেন। হেঁটে অফিসে যাওয়ার সময় অজ্ঞাতপরিচয় দুজন ব্যক্তি ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তার পেছন থেকে ব্যাগ টেনে ধরেন। এরপর হ্যান্ডকাফ পরিয়ে এলোপাতাড়ি কিলঘুসি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে তাকে জোরপূর্বক প্রাইভেটকারে তোলা হয়। তখন তার পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা বের করে নেয় তারা। পরে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুজন পালিয়ে যান। এ ঘটনায় রিয়াজ হোসেন বাদী হয়ে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করেন।
মন্তব্য করুন