শেখ হারুন
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৫২ এএম
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পাঁচ বছরে ১৬১২ উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন

উদ্বোধন হয়েছে ৬টি মেগা প্রকল্প
পাঁচ বছরে ১৬১২ উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন

বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। এই সময়ে ছোট-বড় এবং মেগা প্রকল্পের সমন্বয়ে দেশের অবকাঠামো খাতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলী টানেলের মতো বড় মেগা প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করা হয়েছে। এরই মধ্যে যার সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের জনগণ।

সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে গত পাঁচ বছরেই ১ হাজার ৬১২টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাঁচ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সরকার বরাদ্দ বাড়িয়েছে প্রায় লাখো কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে কাজ করছে সরকার।

উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ নজর ছিল অবকাঠামো উন্নয়ন। এ ক্ষেত্রে সড়ক, সেতু ও রেলপথকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উন্নয়নে প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কৃষিও ছিল সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উন্নয়ন টেকসই হলে জনগণ এর সুফল পাবে। শুধু বেশি বেশি উন্নয়ন প্রকল্প নিলেই হবে না। বাড়াতে হবে বাস্তবায়ন দক্ষতা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে ১ হাজার ৬১২টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে একনেকে অনুমোদন পেয়েছে ৯০০ প্রকল্প। আর পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন প্রায় ৭০০ প্রকল্প। যদিও অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে বড় একটি অংশ সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। সরকার গঠনের পর থেকে ৯৯টি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেসব সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

গত পাঁচ বছরে দেশের উন্নয়নে প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি কালবেলাকে বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্যই ছিল দেশের উন্নয়ন। এজন্য বেশি বেশি উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প নিলে দেশের যেমন উন্নয়ন হয়, একইভাবে জনগণ এর সুবিধা পায়। এ ছাড়া পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, ডেলটা প্ল্যান এবং এসডিজির লক্ষ্য পূরণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার ছিল অবকাঠামো উন্নয়ন। এ ক্ষেত্রে সড়ক, সেতু ও রেলপথকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্যই এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কৃষি খাতের উন্নয়নেও অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারি এখন উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া দরকার। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের আরও দক্ষতা উন্নয়ন করা দরকার।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে জনগণ সেটির সুবিধা অবশ্যই পাবে। শুধু বেশি বেশি প্রকল্প অনুমোদন দিলেই হবে না। বাস্তবায়ন যথাযথভাবে হচ্ছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে কেনাকাটায় সরকারের বিশেষ নজর রাখতে হবে। যাতে কেনাকাটায় অনিয়মের মাধ্যমে জনগণের টাকা চুরি না হয়।

তিনি বলেন, প্রকল্পের সংখ্যা দিয়ে কিছু বিচার করা ঠিক হবে না। বাস্তবায়ন দক্ষতায় জোর দিতে হবে। প্রকল্পগুলো যারা বাস্তবায়ন করবে, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। বাস্তবায়নে অদক্ষতার কারণেই মূলত প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যায়, সেটা যেন না হয়।

বিভিন্ন একনেক সভা এবং পরিকল্পনা বিভাগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একনেক সভায় ও পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদিত মোট ৪১৪ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে অনুমোদন পেয়েছে ২৪৮ প্রকল্প, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২২৩ প্রকল্প, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৫৬ প্রকল্প, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২২৭ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সর্বশেষ একনেক পর্যন্ত ২৪৪ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

২০২২-২৩ অর্থবছরে যে প্রকল্পগুলো একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন, তার মধ্যে নতুন প্রকল্প ৮২টি, সংশোধিত ৬০ এবং ১৫টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ৮৫ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন।

এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের যেখানে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। সেখানে এবার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। এডিপির আকার বেড়েছে ৯৮ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। যদিও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোর যে চাহিদা রয়েছে, তার আলোকে বরাদ্দ দিতে পারছে না সরকার। যার ফলে অনেক প্রকল্পই নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

বর্তমান সরকারের আমলেই অনেক মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেগুলোর সুফলও পেতে শুরু করেছে জনগণ। রাজধানীবাসীর যানজটের দুর্ভোগ লাঘব করেছে মেট্রোরেল। দক্ষিণবঙ্গের স্বপ্নের পদ্মা সেতু হওয়ায় সাত-আট ঘণ্টার যাত্রা এখন তিন-চার ঘণ্টায় নেমে এসেছে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ হওয়ায় স্বল্প সময়ে ঢাকা থেকে যাওয়া যাচ্ছে যশোর-খুলনায়।

সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ট্রেন চলাচল। চট্টগ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করেছে কর্ণফুলী টানেল। এ ছাড়া বেশ কিছু উড়ালসহ বড় বড় সেতু এবং অবকাঠামো দেশের জনগণের জীবনযাত্রা করেছে অনেক সহজ। জানা গেছে, নভেম্বর পর্যন্ত মেগা প্রকল্পগুলোর গড় অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৮৬ শতাংশ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাশিয়ার সাবেক উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গ্রেপ্তার

ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে?

মানামার বাতাসে দূষণ সবচেয়ে বেশি, ঢাকার পরিস্থিতি কী

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার বর্জ্যে দুর্ভোগে ৩ লাখ মানুষ

স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

অলিম্পিকে নিষিদ্ধ ছিল যে দেশগুলো

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

উদ্বোধনীতে অ্যাথলেটদের চেয়ে বেশি উৎফুল্ল বাংলাদেশের কর্তারা

কুষ্টিয়ায় নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতার ছেলে গ্রেপ্তার

৬ দিন পর বরিশাল-ঢাকা রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু

১০

ভেজানো ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

১১

হামলা মামলা ও লাঞ্ছনার শিকার লালমনিরহাটের ৬ সাংবাদিক

১২

কলেজছাত্রীকে বিবস্ত্র, লজ্জায় আত্মহত্যা

১৩

প্যারিসের আলোয় উদ্ভাসিত অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

১৪

ট্রলার উদ্ধারে গিয়ে ডুবল স্পিডবোট, সৈকতে ভেসে এল ২ মরদেহ

১৫

সিলেটে ‘অবৈধ’ নিয়োগে প্রভাষক জালিয়াতিতে অধ্যক্ষ!

১৬

সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী শনিবার

১৭

ইতিহাসে এই দিনে কী ঘটেছিল?

১৮

অস্ট্রেলিয়ায় উদ্ভাবিত বিশ্বের প্রথম টাইটানিয়াম হার্ট মানবদেহে প্রতিস্থাপন

১৯

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

২০
X