জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব পড়েছে সচিবালয়ে। ভোট সামনে রেখে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলে তাদের উদ্দেশ্য করে সচিবালয়ে প্রবেশকারী দর্শনার্থীর সংখ্যা কমেছে। দপ্তরে দপ্তরে আগের মতো সাধারণ মানুষের দৌড়ঝাঁপ নেই। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ছাড়া অন্যান্য ফাইলের নড়াচড়া একেবারেই কম।
কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ভোটের মাঠে থাকায় তাদের একান্ত সচিব (পিএস) ও সহকারী একান্ত সচিবদের (এপিএস) কক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। অথচ অন্যান্য সময় পিএস-এপিএসদের কক্ষে সবসময় মানুষের ভিড় লেগে থাকত। এখন মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলো অনেকটাই ফাঁকা। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীও কাজ কম থাকার সুবাদে নিয়মিত অফিসে আসছেন না। আবার অনেকে বছরের শেষ সময়ে এসে ছুটি কাটাচ্ছেন। ফলে দর্শনার্থীর সংখ্যাও অনেক কমে গেছে। সব মিলিয়ে সচিবালয়ে কাজকর্মে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একজন লিফটম্যান কালবেলাকে বলেন, ভোটের কারণে সচিবালয়ে এখন মানুষ কম আসে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিলের আগে লিফটে সবসময় গাদাগাদি লেগে থাকত। এখন সেরকম পরিস্থিতি নেই।
বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, কর্মকর্তারা সময়মতো অফিসে আসছেন না। আবার এলেও মধ্যাহ্ন ভোজের পরপর অনেকেই চলে যান। তবে নিচের দিকের কর্মচারীরা ঠিকমতো অফিস করেন। তারা ৯টার অফিসে ৯টাই আসেন। যানও ৪টার পর। তবে এই নিয়মের তোয়াক্কা করেন না কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, তপশিল ঘোষণার পর থেকেই দাপ্তরিক কাজকর্ম কমে গেছে। যেসব মন্ত্রণালয় উন্নয়ননির্ভর, সেসব মন্ত্রণালয়-বিভাগে কাজ অনেক কমেছে। তবে অতি গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের কাজ চলমানই রয়েছে। কিছু কিছু ফাইল ভোটের আগে আর নড়াচড়া করতে চান না তারা। মন্ত্রণালয়-বিভাগে অন্যান্য সময় তদবিরকারীর ভিড়ে অতিষ্ঠ থাকেন কর্মকর্তারা। এখন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা কম আসার কারণে তাদের কাছে লোকজনও তেমন আসেন না। ফলে তদবিরকারীর ভিড় কমেছে। স্বাভাবিক সেবাপ্রত্যাশীর ভিড়ও আগের মতো নেই। বলতে গেলে অনেকটা ঢিমেতালেই চলছে প্রশাসনের কাজকর্ম।
গত ২১ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্দেশনা দিয়েছিল, ভোটের আগে নির্বাচনী এলাকায় নতুন প্রকল্প গ্রহণ, অর্থছাড়, অনুদান বা ত্রাণ বিতরণ এবং নতুন ভিজিডি কার্ড দেওয়ার মতো কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে আলাদা আলাদা চিঠি দেন ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব আতিয়ার রহমান।
চিঠিতে বলা হয়, এরই মধ্যে অনুমোদিত কোনো প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে খুব জরুরি হলে ইসির সম্মতি নিয়ে তা করা যাবে। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রার্থী হলে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা ভোটের প্রচারকাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। নির্বাচনী এলাকায় নতুন কোনো প্রকল্প ঘোষণা, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বা ফলক উন্মোচনেও নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসি। ইসির এমন নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাজ কমেছে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিনিয়র সচিব ও সচিব কালবেলাকে বলেন, এখন আমরা শুধুই রুটিন দায়িত্ব পালন করছি। নতুন কোনো প্রকল্প কিংবা উন্নয়ন কাজ হাতে নিচ্ছি না। তবে চলমান প্রকল্পের কাজগুলো আগের মতো চলছে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও তাদের দপ্তরে সংযুক্ত কর্মকর্তাদের অনেকেই নিয়মিত অফিসে আসেন না। ফলে তাদের কাছে লোকজনও আসে না। তবে নিয়মিত সভাগুলো চালু রয়েছে। সভার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সভায় উপস্থিত থাকেন। তারা আরও বলেন, এখন পুরো প্রশাসনের চোখ ভোটের মাঠে। ফলে সচিবালয়ের কাজকর্মে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় বসলে ফের প্রশাসনে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হবে বলেও জানান তারা।