সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি বুধবার দিন থেকেই ছিল বিপৎসীমার ওপরে। রাতে ভারতের মেঘালয় থেকেও নামে ব্যাপক ঢল। প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েন চার লক্ষাধিক মানুষ। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েন বন্যাকবলিতরা। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করছে সিলেটের কোটি মানুষকে। এদিকে, বন্যার কারণে সিলেট জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রশাসন।
বন্যাদুর্গত পাঁচ উপজেলায় কাজ করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিতরণের জন্য শুকনো খাবার, চাল ও নগদ টাকা উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বন্যাকবলিত গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৫৬টি, জৈন্তাপুরে ৪৮, কানাইঘাটে ১৮, কোম্পানীগঞ্জে ৩৫ ও জকিগঞ্জে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন হাজারো মানুষ। বন্যায় আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছেন সেনাবাহিনী বিজিবি, জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশের টিম, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, আনসার-ভিডিপি এবং বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার জৈন্তাপুরসহ বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দও বন্যাদুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত উপজেলার বাসিন্দাদের জন্য ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ৭৫ টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা ত্রাণসামগ্রী হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব উপজেলায় আরও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে পানিবন্দি এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজা আক্তার সিমুল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমা তুজ জোহরা সানিয়া, ওসি তাজুল ইসলাম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপরে এবং কুশিয়ারার পানি জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে ২০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়া জৈন্তাপুরে সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং গোয়াইনঘাটে সারিগোয়াইন নদীর পানি ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বুধবার রাতে গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে ৩৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে জৈন্তাপুরের লালাখালে রেকর্ড হয়েছে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাত এবং ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলেই সিলেটের নদনদীর পানি দ্রুত বেড়ে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।
জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বলেন, উঁচু এলাকা ছাড়া সব প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও ঘরের চাল পর্যন্ত পানি উঠেছে। বুধবার রাতে প্রবল স্রোতে উদ্ধারাভিযান ভালোভাবে পরিচালনা করা না গেলেও বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই পুরোদমে অভিযান চলে।
সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের কর্মকর্তারা দিনরাত কাজ করছেন।