কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:০৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গণমুখী শিক্ষার বিস্তারে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া

ড. আবুল হাসনাত মোহা. শামীম
ড. আবুল হাসনাত মোহা. শামীম। ছবি : সংগৃহীত
ড. আবুল হাসনাত মোহা. শামীম। ছবি : সংগৃহীত

শিক্ষাক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের সংস্কার ও উন্নয়নের ধারাকে নতুন মাত্রা দান করেছিলেন তার সহধর্মিণী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। তার নেতৃত্বে নারীর উন্নয়ন শুধু আইনি ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং বাস্তবজীবনে নারীর শিক্ষা, কর্মসংস্থান, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে নারীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে জাতীয় উন্নয়নের মূলস্রোতে যুক্ত হতে শুরু করে। তার শাসনামলে প্রণীত হয় বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন। মেয়েদের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি হয়

আপসহীন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের অগ্রদূত এই নেত্রী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কাজ করেছেন দেশের গণমানুষের উন্নয়ন, সমাজ কাঠামোর ইতিবাচক রূপান্তর এবং বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করার মহান ব্রত নিয়ে। এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর শিক্ষা ইতিহাসে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান এক অনন্য অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি যে সংস্কারের ধারা প্রবর্তন করেছিলেন, তা শুধু নীতিপর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো, বিস্তার ও মানোন্নয়নে সুস্পষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল।

কারিগরি ও উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে শহীদ জিয়ার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার নীতিও ছিল সুস্পষ্ট—শিক্ষাকে কর্মমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর করা। তিনি নতুন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন এবং কৃষি ও প্রকৌশল শিক্ষার আধুনিকীকরণে পদক্ষেপ নেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তিনি উচ্চশিক্ষায় গুণগত পরিবর্তনের পথ তৈরি করেন। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ১৯৮০ সালে সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাসের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষাকেও একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোর অধীনে আনেন। এ ছাড়া ১৯৭৬ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা পরিষদ গঠন এবং ১৯৮০ সালে গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু করে তিনি শিক্ষা ও বিজ্ঞান উভয় ক্ষেত্রের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের সংস্কার ও উন্নয়নের ধারাকে নতুন মাত্রা দান করেছিলেন তার সহধর্মিণী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। তার নেতৃত্বে নারীর উন্নয়ন শুধু আইনি ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং বাস্তবজীবনে নারীর শিক্ষা, কর্মসংস্থান, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে নারীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে জাতীয় উন্নয়নের মূলস্রোতে যুক্ত হতে শুরু করে। তার শাসনামলে প্রণীত হয় বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন। মেয়েদের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ছাত্রীদের জন্য চালু হয় শিক্ষা উপবৃত্তি ও শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি, যা বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে বিরাট ভূমিকা রাখে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করে তিনি উচ্চশিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগের দ্বার বিস্তৃত করেন। তার সময়েই বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় এবং প্রথমবারের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়, যা উচ্চশিক্ষার বহুমাত্রিকতা ও প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করে।

১৯৯৫ সালে তিনি প্রবর্তন করেন বেগম রোকেয়া পদক—নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য একটি গৌরবময় সম্মাননা। একই সঙ্গে মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, নারী ও শিশু পাচার রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেন। নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে বিনামূল্যে বই বিতরণ ও উপবৃত্তি প্রদান তার সময় নারীর শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

আপসহীন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া স্বৈরাচারবিরোধী সফল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। যে জনতার সাহায্য নিয়ে বেগম জিয়া দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন, তিনি সবার আগে চেষ্টা করেন তাদের জীবনমান উন্নয়নে। তাইতো ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর তার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠিত হয় বাউবি। এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশে প্রথমবারের মতো দূরশিক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষাকে সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। আজ তিন দশক পর এ প্রতিষ্ঠান শুধু দেশের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে জনমুখী শিক্ষা বিস্তারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বাউবির অভিযাত্রা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের গল্প নয়, এটি একটি জাতির শিক্ষার প্রতি অঙ্গীকারের প্রতীক। বেগম খালেদা জিয়ার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন সরকারের সমর্থনে এ প্রতিষ্ঠান আজ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, তা আমাদের গর্ব করার মতো অর্জন। ভবিষ্যতে বাউবি যখন তার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে, আমরা আশা করব এটি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আরও বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

একটি দেশ তখনই সামনে এগোয়, যখন তার শিক্ষাব্যবস্থা সব স্তরের মানুষের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। বাউবি সেই লক্ষ্য পূরণের পথে একটি উজ্জ্বল মাইলফলক। এ প্রতিষ্ঠানের সাফল্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, শিক্ষার আলো সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত—এটিই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের মূলমন্ত্র। বাউবির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোই প্রমাণ করে যে, সঠিক নেতৃত্ব এবং দূরদর্শী পরিকল্পনা দিয়ে একটি জাতির ভাগ্য বদলে দেওয়া সম্ভব। এ প্রতিষ্ঠানটি সাফল্যের শিখরে উন্নীত হলে একদিকে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শহীদ জিয়ার স্বপ্ন যেমন বাস্তবে রূপ নিতে পারবে, তেমনি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার উদ্যোগ ও প্রচেষ্টারও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

লেখক : অধ্যাপক, গবেষক ও ট্রেজারার, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ডিরেক্টর (ফিন্যান্স), জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মালয়েশিয়ায় দুই বাংলাদেশির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ

হরিণের মাংসসহ আটক ৮

যে বিলাসবহুল নেশায় বছরে ৬০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করেন হলান্ড

পাটুরিয়ায় ফেরিঘাটে ভাঙন, ৪ নম্বর ঘাটও ঝুঁকিতে

দুই কারণে বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম

ত্বকের যত্নে ম্যাজিকের মতো কাজ করে যে ৫ ফল

আপনি কি জানেন, কেন তালার নীচে ছোট্ট ছিদ্র থাকে?

বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর জর্জিনাকে কত টাকার উপহার দিয়েছেন রোনালদো?

ফ্রিজে রাখা কাটা পেঁয়াজ কি খাওয়া উচিত, যা বলছেন বিশেষজ্ঞ

লুট হওয়া পাথর বালু ও মাটি দিয়ে আড়ালের চেষ্টা

১০

যেসব দেশে থাকার জন্য টাকা পাওয়া যায়

১১

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম এখন কত

১২

ডিএমপিতে অনলাইন জিডি করবেন যেভাবে

১৩

৪ জনের মরদেহ উদ্ধার / ‘আমরা বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম সেই ভালো’ লেখা চিরকুটে আরও যা ছিল

১৪

ঝিনাইদহ সাংবাদিক ফোরাম ঢাকার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন 

১৫

পানিবন্দি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খিচুড়ি পৌঁছে দিলেন ইউএনও

১৬

১০৭ বছর বয়সেও চশমা ছাড়া কোরআন পড়েন নুর জাহান

১৭

প্রেম, স্মৃতি আর বিদায়ের গল্পে লিসা-কেনতারো

১৮

গোপালগঞ্জে বেগম খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকী পালিত

১৯

আমিরের সঙ্গে দিব্যর স্বপ্নময় মুহূর্ত

২০
X