

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল। আজকের এ দিনে যাদের দেশ-বিদেশে লাখ লাখ ভক্ত। শ্রোতাদের এ তালিকা দীর্ঘ করতে লিংকন, সাজু, সেজানদের দিনের পর দিন, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটাতে হয়েছে, বিশ্বাস রাখতে হয়েছে নিজেদের ওপর, গিটার নিয়ে শক্ত হাতে যুদ্ধ করতে হয়েছে—সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। এর সঙ্গে সঙ্গে উপহার দিতে হয়েছে ‘ধূসর সময়’, ‘তোমাকে’, ‘দুঃখ বিলাস’, ‘পথচলা’ ও ‘অনিকেত প্রান্তর’-এর মতো কালজয়ী সব গান। আজ নিজেদের নতুন-পুরোনো গান দিয়ে স্টেজ মাতাচ্ছে দলটি। ব্যান্ড ইন্ড্রাস্টিতে আর্টসেল এ বছর নিজেদের ২৬ বছর পূর্ণ করেছে।
ব্যান্ড আর্টসেল। ছবি: সংগৃহীত
আর্টসেল এরই মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের রজতজয়ন্তী পালন করেছে। ২০২৪ সালে তাদের পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছে। যেটি উদযাপনে দেশ ও দেশের বাইরে অসংখ্য কনসার্ট করেছে তারা। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে করা হয় আয়োজন। শ্রোতাদের কাছ থেকে অসম্ভব ভালোবাসা পাওয়া দলটি এরই মধ্যে ওশেনিয়া মহাদেশের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেছে। সেখানে কনসার্ট করার পাশাপাশি দেখবে মেটালিকার কনসার্টও।
ব্যান্ড আর্টসেল। ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে কালবেলার সঙ্গে আড্ডা হয় আর্টসেলের। জানান নিজেদের গান ও ব্যান্ড নিয়ে পরিকল্পনার কথা। শুরুতেই আর্টসেলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য জর্জ লিংকন ডি কোস্তা নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা আর্টসেলকে নিয়ে এ ঝড়ের মধ্যে, বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে সংগ্রাম করে আজকের এ অবস্থানে এসেছি, তাদের একটাই লক্ষ্য—সেটি হচ্ছে আর্টসেল। আমাদের সবার নিজস্ব পরিচয় রয়েছে। এ পরিচয়কে ছাপিয়ে আমরা আমাদের ব্যান্ডের পরিচয়ে নিজেদের আরও বেশি প্রসারিত করতে চাই। আজকে যারা ব্যান্ডের সঙ্গে আছেন, তাদের নিয়ে পৃথিবীর বুকে আমরা এমন একটি শো করতে চাই, যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এর বাইরে আর্টসেলের কোনো স্বপ্ন নেই। আমরা সবাই ফুলটাইম মিউজিক করি। কারণ, ব্যবসা, চাকরিসহ অন্য যে কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাশাপাশি মিউজিক করা সম্ভব নয়। সবাই আর্টসেলের জন্য নিবেদিত। তাই এ ব্যান্ডকে নিয়েই আমাদের সব চাওয়া-পাওয়া। শ্রোতাদের যে ভালোবাসা এ ইন্ডাস্ট্রি থেকে আমরা পেয়েছি, এর চেয়ে বড় কিছু অর্জন করা আমাদের সম্ভব নয়। আর আমরা কখনো জনপ্রিয়তার জন্য গান করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। শুধু ভালোবাসার জন্য আমাদের গান। ভক্তদের কাছে একটাই চাওয়া—আর্টসেলকে ভালোবাসুন, আমরা আপনাদের ভালোবাসি।’
জর্জ লিংকন ডি’কস্তা (ভোকাল ও রিফ)। ছবি: সংগৃহীত
এসময় নিজেদের পুরোনো ও নতুন গান নিয়ে লিংকন আরও বলেন, ‘আমরা আসলে পুরোনো গানকে ছাপিয়ে যাওয়া নিয়ে কখনো চিন্তা করি না। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভালো গান করা, ভালো সুর সৃষ্টি করা। আমরা সবসময় চেষ্টা করি সৎভাবে মিউজিক ও গান তৈরি করার। সে জায়গা থেকে প্রতিটি গানের আলাদা আলাদা গল্প থাকে। এ গল্পগুলো যখন কোনো শ্রোতা বুঝতে পারবে, তখন সে আমাদের প্রতিটি গানই পছন্দ করবে। তাই পুরোনো গানকে নতুন গানগুলো ছাপিয়ে যাবে কি, যাবে না, তা নিয়ে আলোচনাই থাকা উচিত নয়।’
এরপর নিজেদের নতুন চারটি গান নিয়ে আর্টসেলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও ড্রামার কাজী আশেকিন সাজু বলেন, ‘আর্টসেল ‘চতুর্থাংশ’ নামের একটি নতুন ইপি প্রকাশ করছে, যেখানে চারটি নতুন গান রয়েছে। যেগুলোর শিরোনাম ‘ও আকাশ’, ‘একটা নতুন গান’—প্রকাশ পেয়েছে। এ ছাড়া ‘বিদায় কীভাবে জানাই’ এবং শেষ গান ‘জানি ভুল করেছি’ নভেম্বরের শেষ দিকে মুক্তি পাবে। প্রকাশ পাওয়া দুটি গান এরই মধ্যে শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। এর কারণ, আর্টসেল সবসময় নতুন মিউজিক দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা চাই, যেটি নতুন সেটি একবারই যেন নতুন হয়। পুরোনো কোনো কিছুর সঙ্গে যেন এর মিল পাওয়া না যায়। তাই আমরা সবসময় চেষ্টা করি নতুন মিউজিক তৈরি করতে, যা আমাদের শ্রোতাদেরও পছন্দ। সেই জায়গা থেকেই ‘চতুর্থাংশ’ নিয়ে কাজ করা। আশা করছি, বাকি দুটি গানও দর্শকের মাঝে সাড়া ফেলবে।’
কাজী আশেকিন সাজু (ড্রামার)। ছবি: সংগৃহীত
এ সময় সাজুর কাছে নতুন গানগুলো পুরোনো গানকে ছাপিয়ে যাবে কি না—জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘জেনারেশন বাই জেনারেশন আমাদের শ্রোতা এত পরিবর্তন হয়েছে যে, আমি নির্দিষ্ট করে বলতে পারি—আজকের দিনে ‘অনিকেত প্রান্তর’ প্রকাশ হলে হিট হতো না। কারণ, মানুষ এখন অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্ত। তাদের হাতে সময় কম, তাদের টেস্ট পরিবর্তন হয়েছে। এখন পাঁচ মিনিটের গান পাঁচ সেকেন্ড শুনেই তারা নতুন একটি গানে চলে যায়। তাই আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে বা তারও আগে যে ভালোবাসা পেয়েছি এবং এখন যে ভালোবাসা পাচ্ছি, দুটি না মিলানোই ভালো। শ্রোতারা পুরোনো হোক কিংবা নতুন, তারা গান শুনুক—সেটাই আমাদের চাওয়া।’
সায়েফ আল নাজি সেজান। ছবি: সংগৃহীত
ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাকালীন আরেক সদস্য সায়েফ আল নাজি সেজান বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী হয়েছেন। এবার দলের সঙ্গে অনেকদিন পর তিনি স্টেজে বাজাবেন। তাই তাকে ঘিরে গোটা ব্যান্ডই উচ্ছ্বসিত।
আর্টসেলের আর দুই সদস্য কাজী ফয়সাল (লিড গিটার) ও ইকবাল আসিফ জুয়েল (লিড গিটার), যারা ব্যান্ডের সঙ্গে অনেক বছর ধরেই বাজাচ্ছেন।
ফয়সাল। ছবি: সংগৃহীত
আর্টসেল নিয়ে ফয়সাল বলেন, ‘দেশের বাইরে আমাদের ব্যান্ডের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। যার কারণে বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে আমরা শো করছি। এ বিষয়টির মধ্যে সবচেয়ে ভালো লাগে সেটি হচ্ছে, দেশে কনসার্ট করলে শ্রোতাদের থেকে যে ভালোবাসা পাই, একই রকম ভালোবাসা এখন আমরা দেশের বাইরে থেকেও পাচ্ছি। এটি আনন্দের।’
ইকবাল আসিফ জুয়েল (লিড গিটার)। ছবি: সংগৃহীত
সর্বশেষে জুয়েল জানান, অস্ট্রেলিয়ায় তারা প্রথমবারের মতো তাসমানিয়ায় কনসার্ট করবেন। এ শহরে আগে কখনো আর্টসেল পারফর্ম করেনি। তাই বিষয়টি নিয়ে তারা উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত।
ব্যান্ডের বর্তমান সদস্য জর্জ লিংকন ডি’কস্তা (ভোকাল ও রিফ), কাজী আশেকিন সাজু (ড্রামার), সায়েফ আল নাজি সেজান (বেজ গিটার), কাজী ফয়সাল (লিড গিটার), ইকবাল আসিফ জুয়েল (লিড গিটার)। বাঁধন বর্মন ব্যান্ডের মুখপাত্র।
আর্টসেলের কনসার্টের তালিকা। ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়ায় যেসব শহরে কনসার্ট করবে আর্টসেল মেলবোর্নে (২৫ অক্টোবর), তাসমানিয়া (২৬ অক্টোবর), সিডনি (১ নভেম্বর) ও অ্যাডিলেডে (৭ নভেম্বর) পারফর্ম করবে।
মন্তব্য করুন