লিখে রাখুন আমি আরব একজন আর আমার কার্ডের সংখ্যা পঞ্চাশ হাজার আট ছেলেমেয়ে আমার আর নবম শিশুটি আসছে গ্রীষ্মের পরেই। তা নিয়ে রাগ দেখানোর কী আছে?
আরও লিখে রাখুন। আমি আরব একজন কঠোরশ্রমী কমরেডদের সঙ্গে কোয়ারিতে পাথর কাটি। আমার আট ছেলেমেয়ে তাদের জন্য যেভাবেই পারি রুটির টুকরো বাঁচিয়ে রাখি, পাথর কুঁদে জামাকাপড় আর বইখাতা কিনি তবু আপনার দরজায় এসে ভিক্ষে করি না, আপনার দরজার চৌকাঠে এসে মাথা নোয়াই না। তা নিয়ে রাগ দেখানোর কী আছে?
আরও লিখে রাখুন। আমি আরব একজন । আমার নামের সামনে কোনো খেতাব নেই, যেখানে সবকিছু ক্ষোভের ঘূর্ণিস্রোতে পাক খায় সেখানে আমি বড় ধৈর্য্যশীল মানুষ। আমার শেকড় শক্ত করে গেঁথে গেছে সময়েরও জন্মের আগে যুগটা পুঁজিবাদী হওয়ার আগেই সাইপ্রেস আর জলপাই গাছগুলোরও আগে, আগাছা বাড়বাড়ন্ত হওয়ারও আগে। আমার বাবা চাষাপরিবারেরই একজন অভিজাত বা ডাকসাইটে কেউ নয়। আর আমার বাবার বাবা ছিলেন চাষা কোনো যোগসূত্র বা বংশপঞ্জি নেই। অক্ষরজ্ঞানের আগেই আমাকে ধারণা দিয়েছেন ওই দাম্ভিক সূর্যটা সম্পর্কে আর আমার বাড়িটা আসলে দরোয়ানেরই একটি ঘর। নলখাগড়া ও বেতের বেড়া-দেওয়া। আমার কুলজি কি তুষ্ট করলো আপনাকে? আমি একটা নাম যার কোনো খেতাব নেই।
লিখে রাখুন। আমি আরব একজন। চুলের রং: ঘন কালো। চোখের রং: বাদামি।
শনাক্তকারী চিহ্ন: মাথার উপর কেফিয়ের ঠিক উপরে যে ’ইকাল শিরাটি যেই ছুঁতে যায় তাকেই খামচে দেয়।
ঠিকানা: এক গ্রাম থেকে এসেছি, প্রত্যন্ত এলাকা, ভুলে গেছি গ্রামের অলিগলির কোন নাম নেই আর সব মানুষই মাঠেময়দানে আর পাথরের কোয়ারিতে। তা নিয়ে রাগ দেখানোর কী আছে, বলুন?
লিখে রাখুন। একজন আরব আমি। আপনি আমার পিতৃপুরুষের আঙুর বাগান ছিনিয়ে নিয়েছেন আর কেড়ে নিয়েছেন জমিজমা ছেলেমেয়েদের নিয়ে যাতে আবাদ করতাম আমি আর আপনি আমাদের জন্য আমাদের নাতিপুতিদের জন্য কিছুই রাখেননি, এইসব পাথুরে পাহাড় ছাড়া। আপনার সরকার তাও কি ছিনিয়ে নেবে আপনার সরকার যেমনটা বলে থাকে?
তাহলে! প্রথম পৃষ্ঠার একেবারে ওপরে লিখে রাখুন: মানুষকে আমি ঘেন্না করি না, কারো সম্পত্তিতে আমি নাকও গলাই না। আর তারপরও যদি আমাকে উপোষই করতে হয় দখলদারদের মাংস চিবিয়ে খাব আমি। আমার ক্ষুধা আর আমার ক্রোধের হাত থেকে সাবধান, খুব সাবধান!
[ ফিলিস্তিনের বিখ্যাত কবি মাহমুদ দারবিশ ১৯৪৮ সালে ইসলায়েলি দখলদারিত্বে উদ্বাস্তু হয়ে পরিবারের সঙ্গে লেবাননে আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসিন আরাফাতের সঙ্গে ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনে যোগ দেন। কিন্তু ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির পর দারবিশ দল থেকে বের হয়ে যান। তারমতে, ওই চুক্তিতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কোনো ন্যায়বিচার ছিল না।
রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে ১৯৬১, ১৯৬৫ এবং ১৯৬৭ সালে জেলে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া ১৯৯৪ সালে দারবিশ ফিলিস্তিনের রামল্লায় ফিরে গেলে ইসরায়েলি সৈন্যরা তাকে গৃহবন্দি করে রাখে।
২০০৮ সালে মৃত্যু পর্যন্ত দারবিশ ফিলিস্তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন। তবে শেষ জীবনে তিনি লড়েছেন সাহিত্যের মাধ্যমে, কবিতা দিয়ে। ]
মন্তব্য করুন