

২০১৮ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ওই সময়েই রাজনীতি ও নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম-৩ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল পাশা। কিন্তু এবারও তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি ৫ আগস্টের পর বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খোন্দকার গোলাম আকবরের সঙ্গে দেখা করে রাজনীতিতে পুনরায় সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি অবহিত করেন। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর তিনি বলেছেন, তাকে যদি বিএনপি থেকে নমিনেশন না দেওয়া হয় তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন। তার এমন অবস্থানে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে নানা রকম প্রশ্ন ও সমালোচনা তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, চব্বিশের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিএনপিতে আবারও ভিড়তে শুরু করেছেন সুসময়ের কোকিলরা। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন হলে কিছুদিন পর বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকারের সঙ্গে আলাপ করেন মোস্তফা কামাল পাশা। এ সময় আরও কয়েকজন স্থানীয় নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
দুই নেতার আলাপচারিতার একটি ভিডিওতে শোনা যায়, মোস্তফা কামাল পাশা শুরুতেই হাসতে হাসতে গোলাম আকবর খোন্দকারকে বলেন, আপনার কাছে আসছি, আমি রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এখন আবার ইন (প্রবেশ) করতেছি। এটাই আপনাকে বলতে আসছি। তখন গোলাম আকবর খন্দকার বলেন, আপনি বলেছিলেন যে, আপনি (পাশা) আর পলিটিক্স করবেন না সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেজন্য আপনি আলমগীর ঠাকুরকে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বানানোর কথা বলেছিলেন। আপনার কথার প্রেক্ষিতে তো ঠাকুর প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছে।
এ সময় মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, ‘রাজনীতিতে ঢুকছি এলাকার লোকজনের চাপে। উপায় নাই আমার। লোকেরা ভীষণ চাপ সৃষ্টি করতেছে। এমনিতেই যদিও শরীরের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে।’
এছাড়া তিনি তার বাসায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে বলেছেন, ‘দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় তাহলে দলের থেকে নির্বাচন করব। না হলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করব। এখানে দলের অবস্থা খুবই খারাপ, খুবই খারাপ। আমরা একটা সন্ত্রাসী দল।’
এ-সংক্রান্ত ভিডিও ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৮ সালের সেই রাতের (২৯ ডিসেম্বর) ভোটের নির্বাচনের পর মোস্তফা কামাল পাশা ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি আর রাজনীতি করবে না। অথচ এখন তিনিই আবার নমিনেশন চাচ্ছেন। বিগত ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরশাসনে মোস্তফা কামাল পাশার অবদান কী? এই মোস্তফা কামাল পাশা কয়টা মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছেন? তিনি কতবার কারাবরণ করেছেন, কয়দিন রিমান্ডে ছিলেন? তার বাড়িঘরে কয়বার হামলা হয়েছে এমন প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
তারা বলছেন, এমনকি মোস্তফা কামাল পাশা দলের নমিনেশনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনবার এমপি হলেও বিএনপি ও জিয়া পরিবারের ক্রান্তিকালে তার উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান নেই। কোনো নেতাকর্মীর মামলার জন্য ন্যূনতম সহায়তা তো দূরে থাক তিনি দলের অসহায় কিংবা আহত নেতাকর্মীদের পাশেও ছিলেন না। তার মতো ব্যক্তিই এখন ধানের শীষের নমিনেশন চান। তবে তারেক রহমান অত্যন্ত বিচক্ষণ নেতা। তিনি জানেন মোস্তফা কামাল পাশার মতো সুবিধাবাদীদে কীভাবে প্রতিহত করতে হয়। ইনশাআল্লাহ তারেক রহমান সন্দ্বীপবাসীকে হতাশ করবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, আমি তখন অসুস্থ ছিলাম। মাঝে মাঝে সেন্সলেস হয়ে যেতাম। আমার শরীরে পেস মেকার লাগানো হয়। পরে সেসময় আমাকে নেতাকর্মীরা প্রচণ্ড চাপ দিতে লাগল এবং তারা আমাকে বাধ্য করেছে। এ দিকে তারেক রহমান লোক পাঠিয়ে বলেন যে, আমি নির্বাচন ও রাজনীতি করব না- এ কথা যেন আর না বলি। আমার আর করার কিছু ছিল না। তবে আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ এবং আমি রাজনীতিতে আছি।
নির্বাচন না করার ঘোষণা কেন দিয়েছিলেন- এই প্রশ্ন করলে উত্তেজিত হয়ে যান মোস্তফা কামাল পাশা। তিনি বলেন, আপনাকে কতবার জবাব দিতে হবে? নির্বাচন করব না এটা আমি ১০০ বার বলছি। আপনি কি লিখবেন লেখেন।
মন্তব্য করুন