কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৬ পিএম
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ভোগান্তি কমাতে যাত্রী অধিকার আন্দোলনের ১১ দফা সুপারিশ

যাত্রী অধিকার আন্দোলনের লোগো। ছবি : সংগ্রহীত
যাত্রী অধিকার আন্দোলনের লোগো। ছবি : সংগ্রহীত

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে অটোরিকশা বন্ধসহ ১১ দফা সুপারিশ করেছে যাত্রী অধিকার আন্দোলন।

সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) সংগঠনটির আহ্বায়ক কেফায়েত উল্লাহ শাকিল ও যুগ্ম আহ্বায়ক অন্তু মুজাহিদ স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এই সুপারিশ জানানো হয়।

যাত্রী অধিকার আন্দোলনের মিডিয়া সেলের সদস্য এস এম সজীব এর পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে নিহত সকল বীর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছে যাত্রী অধিকার আন্দোলন। একইসঙ্গে আহত সব যোদ্ধার আশু সুস্থতা কামনা করছে সংগঠনটি।

বার্তাটিতে আরো বলা হয় যে, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর একদিকে যেমন মানুষজন বিজয় উদযাপনে রাজপথে নেমে এসেছে। সবাই মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছেন। অপরদিকে ওই দিন থেকে ভেঙে পড়েছে রাজধানীসহ সারা দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা। এ সময়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও জনতা নিজ দায়িত্বে রাজধানীসহ সারা দেশে ট্রাফিক সামলিয়েছেন। আমরা সেই সকল শিক্ষার্থী ও জনতাকে সাদুবাদ জানাই।

এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, আন্দোলন পরবর্তী সময়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা নিজ নিজ দায়িত্বে ফিরলেও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে তাদের জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। অনেকটাই গাছাড়াভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে ট্রাফিক সদস্যরা বলছেন, সড়কপথে তাদের নির্দেশনা জনসাধারণ মানছেন না। অনিয়ম বা ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীকে বিরত রাখা কিংবা ন্যূনতম সাজা দিলেও অনেকে সংঘবদ্ধভাবে ট্রাফিক সদস্যদের সঙ্গে মারমুখি হচ্ছেন। ফলে বিগত সময়ের তুলনায় একদমই ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। ভোগান্তি বেড়েছে জনজীবনে। নগরীর সব ধরনের রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা রাজধানীর সড়কপথে নেমে পড়েছে। রাজধানীর সব ফ্লাইওভারের উঠে পড়তে দেখা যাচ্ছে অটোরিকশা চালকদের। এমনকি বিমানবন্দরের টার্মিনালেও রিকশা ও অটোরিকশা ঢুকে পড়তে দেখা গেছে।

তা ছাড়া যাত্রীবাহী বাস অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করার জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে উল্লেখ করে বার্তাটিতে বলা হয়, যত্রতত্র যাত্রী উঠানো-নামানো, একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, এক বাস আরেক বাসের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, সড়কের মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, বাড়তি ভাড়া আদায় করার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে।

এমতাবস্থায় যানজট নিয়ন্ত্রণ করে সড়ক পথে গণমানুষের ভোগান্তি কমাতে ১১ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করেছে যাত্রী অধিকার আন্দোলন। অন্তু মুজাহিদ স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এই সুপারিশ জানানো হয়।

সুপারিশ সমূহ হলো :

১। রাজধানীর প্রধান সড়কে রিকশা, অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। বিশেষ করে সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও কম গতির এসব বাহন প্রধান সড়ক অতিক্রম করবে না। তারা এলাকাভিত্তিক বাইপাস সড়ক, সাইড সড়ক, গলিপথ ও যেসব সড়কে বাস চলাচল করে না সেখানে চলাচল করবে। তবে এক্ষেত্রে রিকশা বা অটোরিকশার চালকরা নিজেদের মধ্যে যাত্রী ভাড়ার টাকা শেয়ারিং করতে পারেন। দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নিবেন।

২। রাজধানীর প্রত্যেক রুটে বাস স্টপেজ মার্কিং করে দিতে হবে। স্টপিজের বাইরে কোনোভাবেই যাত্রী উঠানো-নামানো না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ইউটার্ন নেওয়ার সময় সড়কের মোড়ে মোড়ে কোনো যাত্রীবাহী বাস থামবে না এবং যাত্রীও উঠানো-নামানো যাবে না। সব বাস তার নিজ রুটে সুশৃঙ্খলভাবে চলবে। কেউ কাউকে ধাক্কাধাক্কি বা ওভারটেক করবে না।

৩। বাস মালিকরা পরিবহনের চালকদের ওপর আর্থিক প্রেশার তৈরি করতে পারবেন না। তাদের বেতন নির্ধারণ করে দিতে হবে। কোনো ধরনের ভোগান্তি ও আর্থিক অনিময় ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। সড়কে ওয়েবিলের নামে যাত্রী ভোগান্তি বন্ধ করতে হবে। চালক-মালিকদের মধ্যে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ২৪/৭ অর্থাৎ সপ্তাহের ৭ দিনই হাফ ভাড়া কার্যকর করতে হবে।

৪। বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আলাপ করে ফিটনেসবিহীন সব বাস ডাম্পিংয়ে পাঠাতে হবে এবং যেসব পুরনো লক্কড়-ঝক্কড় বাস সেগুলো রাজধানীর বাইরে পাঠিয়ে দিতে হবে। ঢাকার জন্য সব রুটে নতুন ও আধুনিক বাস নামাতে হবে। তবে তা হতে হবে এসি ও নন এসি। সেক্ষেত্রে পরপর দুটি সাধারণ বাসের পর একটি এসি বাস সড়কে চলতে পারে। এতে সড়কপথে নির্ধারিত সময়ে যেমন যাত্রী তার গন্তব্যেও পৌঁছাতে পারবেন আবার এসি বাস থাকায় অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারেও নিরুৎসাহিত হবেন। ফলে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ কমবে।

৫। অফিস আওয়ারে বড় বড় শপিংমল ও বিপণিবিতান বন্ধ রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে বিকেল ৪টা থেকে রাত ২টা বা ৩টা পর্যন্ত কেনাকাটার জন্য শপিং মল, বিপণিবিতান খোলা রাখা যেতে পারে। এতে অফিসগামী যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়া কিছুটা স্বস্তিতে ও নির্ধারিত সময়ে তাদের কর্মস্থলে যেতে পারবেন।

৬। মূল সড়কগুলোর ফুটপাত দখলমুক্ত করে পথচারী চলাচলের উপযোগী করে দিতে হবে। যাতে করে ২-৫ কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন। ভাঙাচোরা ফুটপাতগুলো দ্রুততম সময়ে সংস্কার করতে হবে। সড়কের পাশের দোকান, হাসপাতাল বা শপিংমলের কোনো মালামাল, পরিবহন ফুটপাতে রাখা যাবে না।

৭। একইসঙ্গে রাজধানীর সমস্ত হকারকে পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের জন্য সড়কের বিকল্প হিসেবে সরকারি-বেসরকারি অফিস ছুটির পর ওইসব এলাকায় বিকেল ৪টা বা ৫টার পর থেকে উন্মুক্ত বাজার বসানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এমনকি সেটা মধ্যরাত পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকতে পারে।

৮। রাজধানীর সব ফুটওভারব্রিজ অপসারণ করতে হবে। কেননা, এটা সব মানুষের ব্যবহারের উপযোগী নয়। বিশেষ করে, নারী, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী, বৃদ্ধা, অসুস্থ ব্যক্তিদের চলাচলের উপযোগী নয়। সেক্ষেত্রে পথচারী চলাচলে সড়কে জেব্রাক্রসিং মার্কিং নিশ্চিত করতে হবে। সেটা যাতে পথচারিদের জন্য উন্মুক্ত থাকে সেটা কঠোরতার সঙ্গে মনিটরিং করতে হবে।

৯। রাস্তার মোড়ে মোড়ে থাকা সমস্ত ট্রাফিক বক্স অপসারণ করতে হবে। বিশেষ করে যেসব বক্স ফুটপাত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ট্রাফিক বক্সের কারণে মানুষকে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসতে হয়, ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

১০। ট্রাফিক সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং তাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে ৬ ঘণ্টায় নিয়ে আসা। সেক্ষেত্রে সকাল ৮টা থেকে ২টা ও দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা করা যেতে পারে। প্রয়োজনে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন হিসেবে পার্টটাইম ট্রাফিক পুলিশে যুক্ত করা যেতে পারে।

১১। শব্দদূষণ একধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই রাজধানীর সব মিনিবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাইক থেকে হাইড্রলিক হর্ন অপসারণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ দূষণ রোধে ইলেকট্রিক বাস নামানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

এ ছাড়া বার্তাটিতে নগরজীবনে ভোগান্তি কমাতে দ্রততম সময়ে অবিলম্বে ১১ দফা সুপারিত বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সব ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাত্রী অধিকার আন্দোলন। একইসঙ্গে যাত্রী তথা রাজধানীর সব নাগরিককে ট্রাফিক আইন মেনে চলার পাশাপাশি আরও দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান তারা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

যে কারণে আলিয়ার সঙ্গে অভিনয়ে আগ্রহী ইমরান হাশমি

আশুলিয়ায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৬ সদস্য আটক

ঢাবির বাসে হামলা, ৫ জন গ্রেপ্তার 

চীন সফর করেছেন খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা উপদেষ্টা

টানা ৫ দিন সারা দেশে বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস

আপিল বিভাগের রায় / সরকারি চাকরিজীবীদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তরাও পাবেন উচ্চতর গ্রেড

চট্টগ্রামে টাইগারদের দাপট, বৃষ্টির আগেই বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণে ম্যাচ!

আনিসুল, সালমান ও চৌধুরী মামুন ফের রিমান্ডে 

অল্পতেই পার পেলেন রুডিগার!

১০

রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায় ৮ মে 

১১

চলন্ত ট্রেনের দরজার বাইরে মাথা বের করার চরম পরিণতি

১২

কাশ্মীরের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বললেন কারাবন্দি ইমরান খান

১৩

ব্রাজিলের কোচ হওয়া হচ্ছে না আনচেলত্তির

১৪

ধানের ট্রাকে চাঁদাবাজি, বিএনপি-যুবদলের ৩ নেতা আটক

১৫

হাজিদের সুবিধা দেওয়ার নামে প্রতারণা, সতর্ক করল মক্কা পুলিশ

১৬

পলিথিনে মোড়ানো অ্যাম্বুলেন্স রিকশাভ্যানই রোগীদের ভরসা

১৭

দোকানের বারান্দায় পড়ে ছিল যুবকের মরদেহ

১৮

বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানের ১৩ বছরের সাজা বাতিল

১৯

রোমে বৈশাখী উৎসব উদযাপন বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের

২০
X