রাজধানীর দিয়াবাড়ী মেট্রো গোলচত্বর এলাকার রাইদা বাস ডিপোর মালিক আনোয়ার হোসেন সিকদার (৫৩)। তিনি একজনের কাছে বাস বিক্রির টাকা ও আরেকজনের কাছে ধারের টাকা পেতেন। এই টাকা যাতে পরিশোধ করতে না হয়, সেজন্য তারা পরিকল্পনা করে আনোয়ারকে হত্যা করে।
এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার (২৬ মে) এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন সবুজ ফকির, কালাম ও শাকিল। এর বাইরে মূল এক পরিকল্পনাকারী পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মুহিদুল ইসলাম বলেন, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আসাদুল ও সবুজ। আসাদুলের কাছে ১৮ লাখ টাকায় কিস্তিতে একটি বাস বিক্রি করেন আনোয়ার। ১২ লাখ টাকা দিলেও গত ১৭ জানুয়ারির মধ্যে বাকি টাকা না দিতে না পারায় বাস ও টাকা পাবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি। আর সবুজ ২ লাখ টাকা সুদে ধার নেন আনোয়ারের কাছ থেকে। ধার নেওয়ার বেশি পরিমাণ টাকা সুদ দিলেও সেই টাকা আর শেষ হয় না। পরে তারা আনোয়ারকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তিনি বলেন, বাসের চালক ও হেলপারদের নিয়ে ১৭ জানুয়ারি সকালে রাইদা বাস ক্রয়-বিক্রয়ের লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তারা ও তাদের কয়েকজন সহযোগী মিলে পরিকল্পিতভাবে আনোয়ার হোসেন সিকদারকে রাইদা বাস ডিপোর ভেতরে হত্যা করে। তারা প্রথমে আনোয়ারের মাথায় লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করে এবং পরে গলায় ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। হত্যার পর তারা লাশ গুম ও প্রমাণ নষ্ট করার জন্য মরদেহ বাস ডিপোর উত্তর পাশে টিনের বেড়ার কাছে মাটির নিচে পুঁতে রাখে।
ঘটনার বিষয়ে ডিসি বলেন, ১৭ জানুয়ারি সকালে দিয়াবাড়ী মেট্রো গোলচত্বর এলাকার বাসা থেকে আনোয়ার হোসেন রাইদা ডিপোর উদ্দেশে বের হন। তাকে খুঁজে না পেয়ে ১৮ জানুয়ারি তুরাগ থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন তার স্ত্রী শিউলি আক্তার।
ওই জিডির সূত্র ধরে তথ্য পাওয়া যায়, ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে বিরোধের জেরে আনোয়ারকে হত্যা করা হয়েছে। পরে হত্যায় জড়িত কালাম ও শাকিলকে আশুলিয়া এলাকা থেকে রোববার গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সবুজ নামে আরেকজনকে উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মুহিদুল বলেন, গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তুরাগ থানা পুলিশ দিয়াবাড়ী মেট্রো গোল চত্বরের ডেসকো অফিসের পূর্ব পাশে রাইদা ডিপোর ভেতরের উত্তর পাশের টিনের বেড়াসংলগ্ন মাটির নিচ থেকে আনোয়ারের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় আনোয়ারের স্ত্রী শিউলি আক্তার বাদী হয়ে গ্রেপ্তারসহ আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে তুরাগ থানায় গত রোববার একটি হত্যা মামলা করেন। সে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ডিসি মুহিদুল।
মন্তব্য করুন