আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:১৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কুল চাষে আজাদের ভাগ্যবদলের গল্প

বাগান থেকে কুল সংগ্রহ করছে আজাদ। ছবি : কালবেলা
বাগান থেকে কুল সংগ্রহ করছে আজাদ। ছবি : কালবেলা

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কুল চাষে ভাগ্য ফিরেছে আজাদের। ব্যবসা-বাণিজ্য সব হারিয়ে এক সময় দিশাহারা আজাদ এখন পথের দিশারি। ২০১৯ সালে কৃষি অফিসের পরামর্শে পূর্ব-পুরুষের ১শ শতক জমিতে কাশ্মীরি কুল ও বল সুন্দরী কুল জাতের কিছু চারা দিয়ে বাগান শুরু করেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার বাগানে রয়েছে ঢাকা-৯০, বাউকুল, আপেল কুল, জাম্বুকুল, কাশ্মীরি কুল ও গৌরীমুখী কুল।

সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও জৈব সার ব্যবহার করায় আজাদের কুলের চাহিদাও বেশি। আজাদের কুল বাগান এখন এলাকায় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। বিষমুক্ত কাশ্মীরি কুল আর বল সুন্দরী কুল দিয়ে জীবনের প্রায় সব দুঃখ মুছে কূলে ফিরেছেন আজাদ। উপজেলার চাতরী বেলচুরা গ্রামের কালা বিবির দিঘির পাড়ের চারপাশে আজাদের এই কুলের বাগান।

সরেজমিনে বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় দুইশ বছরের পুরোনো পুকুরের চারপাশজুড়ে কুল চাষ। বাগানের চারদিকে তাকালে শুধু কুল আর কুল। ছোট গাছগুলো কুলের ভারে নুইয়ে পড়েছে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে আগলে রাখা হয়েছে প্রতিটি গাছ। পাখির হাত থেকে বরই রক্ষায় পুরো বাগান জাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়া ও মাটির বৈশিষ্ট্য অনুকূলে থাকায় আনোয়ারায় মিষ্টি কুলের আবাদ ভালো হয়। উপজেলায় শতাধিক কৃষক কুলের চাষ করলেও আজাদসহ ৫ জন কৃষক বাণিজ্যিকভাবে কুলের চাষ শুরু করেছে। তাদের বাগানে ঢাকা-৯০, কাশ্মীরি, আপেলকুল ও বল সুন্দরী কুল রয়েছে। তার দেখাদেখি অনেকেই এখন কুল চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

আজাদুল ইসলাম বলেন, এক সময় আমার ব্যবসা বাণিজ্য ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ি। কৃষি অফিসের পরামর্শে পূর্ব-পুরুষদের ২ একর জমিতে ৩০০ কুলের চারা রোপণ করি। পাশাপাশি আম্রপালি, পেয়ারা, মাল্টা, কাঁঠাল, লিচু ও ইক্ষুসহ প্রায় ১০ প্রকারের গাছ লাগিয়েছি। এতে আমার সব মিলে দুই লাখ টাকা খরচ হয়। প্রতিটি গাছে বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ কেজি কুল রয়েছে। বাগান থেকেই প্রতি কেজি কুল ১০০ টাকা করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে কয়েকদিন পরে দাম কমে যাবে। সব ঠিক থাকলে চলতি বছর আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার কুল বিক্রি করা সম্ভব হবে।

বাগানে গাছের পরিচর্যা ও খরচ সম্পর্কে আজাদ বলেন, এখানে কোনো রাসায়নিক সার বা বিষ ব্যবহার করা হয়নি। শুধু জৈব সার ব্যবহার করেছি। গাছ এখন বড় হয়ে গেছে। ফুল আসার আগে সেচ, সার ও একজন শ্রমিকের বেতনসহ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এ ছাড়া আম, পেয়ারা, লেবু, মাল্টা, কাঁঠাল, সবজিও পাওয়া যায়। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় কুল চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।

উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ছরোয়ার আলম বলেন, কুল চাষে চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। চারা যেহেতু একবারই লাগানো হয় তাই খরচ ও পরিশ্রম কম। এতে কৃষকরা লাভবান হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন, আনোয়ারায় ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই কুল চাষ করলেও বাণিজ্যিকভাবে এই প্রথম কুল চাষ করেছেন আজাদসহ পাঁচ জন। আজাদের বাগানে শুধু জৈব সার ব্যবহার করা হয়। তাই এই কুল খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি। তার বাগান দেখে অনেক বেকার যুবক কুল চাষ করতে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। তার বিষমুক্ত কুল চাষের সফলতায় আমরা বিস্মিত। আমাদের মাঠকর্মীরা কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিশ্বকাপ ড্র ফরম্যাটে বড় পরিবর্তন আনল ফিফা

গোলাম রাব্বানীর দুই পদ বাতিল করল ঢাবি

সাভারে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল

দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না সার

দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলে অটোর ধাক্কা, স্কুলশিক্ষক নিহত

প্রতিটি ইউনিয়নে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা 

ইসলামেই আসবে সত্যিকারের মুক্তি : চরমোনাই পীর

হাসিনার লকারে শুধু পাটের ব্যাগ, যৌথ লকারে সোনার নৌকা-গয়না

রাজশাহীতে আর কোনো পুকুর ভরাট হবে না : বিভাগীয় কমিশনার

বিপিএলে নোয়াখালীর প্রধান কোচ হচ্ছেন সুজন

১০

ব্যালটে যেমন দেখা যাবে এনসিপির শাপলা কলি প্রতীক

১১

বার্জার অ্যাওয়ার্ড ফর ইন্টেরিয়র ডিজাইন ২০২৫ উদযাপন

১২

এনসিপি জোটের ঘোষণা আসতে পারে আগামীকাল

১৩

মিঠুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৪

এরদোয়ানকে নিয়ে মন্তব্য করায় সাংবাদিকের ৪ বছর কারাদণ্ড

১৫

এবার মালয়েশিয়ার কাছে হারল বাংলাদেশ

১৬

পুলিশ বক্সে আশ্রয় নিয়েও বাঁচতে পারলেন না যুবদল কর্মী

১৭

অনলাইন শপিং ও গেমিংয়ে সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়ছে : ক্যাসপারস্কি

১৮

বাউবির ITVET-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হলেন ড. শামীম

১৯

সাবেক সচিব লতিফুল বারির মৃত্যু

২০
X