কোটা আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর কারণে কারফিউ দেওয়া হয়। এরই মাঝে একযোগে খুলে দেওয়া হয়েছে শিল্পাঞ্চল সাভার আশুলিয়ার তৈরি পোশাক কারখানাগুলো।
বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল থেকে কারখানাগুলোতে কাজে যোগদান করে সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোর শ্রমিকরা। অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতোই চলছে উৎপাদন কার্যক্রম।
এদিন সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকায় সাধারণ মানুষ জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হয়েছেন মঙ্গলবারের তুলনায় অনেকটা বেশি। শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর একযোগে খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে সড়কে জনসমাগমের তুলনায় গণপরিবহন ছিল কম। যাত্রীদের অভিযোগ অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে কিছুটা বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে তাদের। সড়কে অ্যাম্বুলেন্স, মালবাহী গাড়ি, ওষুধের কাভার্ড ভ্যান, স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য অটোরিকশা ছাড়া দেখা মেলেনি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী কোনো যানবাহন। সাভারের আমিন বাজার থেকে শুরু করে বলিয়াপুর, হেমায়েতপুর, ফুলবাড়িয়া, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, বিশমাইল নবীনগর, পল্লিবিদ্যুৎ, বাইপাইল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা চোখে পড়েনি। সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সন্ধ্যার দিকে সড়কে দেখা মিলেছে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর টহল টিম। সড়ক ব্যবহারকারীদের একাধিকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা কাজ করছে।
চাকরিজীবী লাবণ্য আমিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হয়েছি। এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যতক্ষণ বাইরে থাকি পরিবারের সবাই এবং আমি নিজেও থাকি চরম আতঙ্কে। দেশে এ কয়দিন যা ভয়াল পরিস্থিতি দেখলাম তা সত্যিই দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। সেদিন অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে দুষ্কৃতকারীদের ইটপাটকেলের আঘাতে অনেকটা মরতে মরতে বেঁচে গেছি।
গার্মেন্টস কর্মী সুমি বেগম বলেন, আমরা আন্দোলন বুঝি না। কিন্তু আমাদের অনেকেই বিনা কারণে আহত হয়েছে। । অনেকক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছি,গাড়ি পাচ্ছি না। সময়মতো না পৌঁছাতে পারলে বেতন কেটে নেবে।
উইন্টার ড্রেস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আন্দোলন ও কারফিউর কারণে কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর কারখানা খুলেছে। তবে এরই মাধ্যে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। এ কয় দিনে আমরা প্রায় দুই লাখ পিস অর্ডার পিছিয়ে গেছি। এই সময়টা আমাদের পিক সিজন। সাধারণত জুলাই থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিক সিজজন। সামনে বড়দিন আর এই সময়টাতেই আমরা একটা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়লাম ।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম কারখানাগুলো খোলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিল্প পুলিশ তৎপর রয়েছে । কারখানা খোলার পর থেকে এ পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে শিল্প পুলিশ কাজ করছে। জরুরি শিপমেন্ট যাদের ছিল তারা মঙ্গলবার থেকেই কার্যক্রম শুরু করেছে । আর বুধবার সকাল থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের শিল্পকারখানা । পুরোদমে চলছে উৎপাদন কার্যক্রম।
মন্তব্য করুন