লক্ষীপুরের রায়পুরে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ১২ বছর ধরে নেই ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এক্সরে মেশিন থাকলেও সেটি চালানোর জন্য লোক নেই ১৫ বছর। এ ছাড়াও দুদিনের ছুটি নিয়ে শামসুদ্দোহা মুন ও মহি উদ্দিন নামের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ৯ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। হাসপাতালে গত চারমাস আগে এনসিডি কর্নারের জন্য সাড়ে ছয় লাখ ওষুধের চাহিদা দিলেও এখনও সরবরাহ করেনি। এতে রোগীরা চিকিৎসা পেলেও তাদের ওষুধ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে হাসপাতালে আসা প্রায় ২শ রোগীদের ফিরে যেতে হচ্ছে অনেকটা বিনা চিকিৎসায়। উপজেলার বাইরে থেকে যেসব চিকিৎসক বিভিন্ন ক্লিনিকে এসে রোগী দেখেন। তাদের ফি বেশি হওয়ার কারণে গরিব রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগের তথ্য মতে, গত ১৫ বছর ধরে মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছে ১১জন, বাকি ৮টি পদ শূন্য। সিনিয়র নার্স স্টাফের ৩০ জনের মধ্যে আছে ২১ জন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা ১১১ জনের মধ্যে আছে ৬০ জন। চতুর্থ শ্রেণির ২৭ জনের মধ্যে আছে ১১ জন। ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো.) চিকিৎসক মো. মহিউদ্দিন ও ১ সেপ্টেম্বর থেকে মেডিকেল অফিসার কাজী সামসুদ্দোহা কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তবে দুজন ওই সময় থেকে কোনো বেতনভাতাও তুলছেন না। কর্তৃপক্ষ এই দুই চিকিৎসকের স্থায়ী ঠিকানায় একাধিকবার চিঠিও পাঠিয়েছেন। কিন্তু সব চিঠিই প্রাপককে না পেয়ে হাসপাতালে ফেরত এসেছে।
রাশেদুন্নবি নামের বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসক পার্শ্ববর্তী হাসপাতাল থেকে এসে সপ্তাহে দুদিন রায়পুরে এসে রোগী দেখেন। চার চিকিৎসক সদর হাসপাতালে ও সিভিল সার্জন অফিসে প্রেশনে এবং দুইজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। ফলে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের ফিরে যেতে হচ্ছে অনেকটা বিনা চিকিৎসায়। প্রতি মাসে মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদের চাহিদা পাঠানো হলেও কোন লাভ হচ্ছে না।
অপরদিকে, ২০১৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে হাসপাতালে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। পদগুলো হলো- চক্ষু, শিশু, কার্ডিওলজি, মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, গাইনি, নাক-কান গলা, এনেসথেসিওলজি ও ডেন্টাল।
গত তিনদিনে সরকারি হাসপাতালে জ্বর ও ডায়রিয়ায় ৮০ জন রোগী ভর্তি হয়। একদিনেই ভর্তি হয়েছে ৪০ জন। গড়ে প্রতিদিন জ্বর ও ডায়রিয়া নিয়ে ২০-২৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। বহির্বিভাগে পেটেব্যাথা, সর্দি, কাশি, জ্বর, ও শ্বাসকষ্টের রোগী বেড়েছে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে বেশি নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।
হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনে কথা হয় ৫৪ বছর বয়সী বৃদ্ধ হজুফা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চোখ ও চর্ম রোগের সমস্যা নিয়ে অনেক দিন ধরে অসুস্থ। হাসপাতালে আসি চিকিৎসক দেখাতে। সবাই বলল চোখসহ কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই নেই।’ বাইরে বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসকের ভিজিট কমপক্ষে ৬০০-৭০০ টাকা এবং সপ্তাহের একদিন বা দুইদিন চিকিৎসক রাশেদুন্নবিকে পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।
রহিমা বেগম (৪৯) নামের রোগী জানান, ‘শিশু চিকিৎসক দেখাতে গ্রাম থেকে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। এখন শুনলাম হাসপাতালে বিশেজ্ঞ চিকিৎসকই নেই। মেডিকেল অফিসারদের কক্ষের সামনে প্রায় ৫০ জনের মতো নারী-পুরুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।’
রায়পুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বাহারুল আলম জানান, ‘প্রতি মাসে নির্দিষ্ট ফরমে সিভিলসার্জন অফিস ও মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্ত্যবরত চিকিৎসক ও শূন্যপদ উল্লেখ করে তালিকা পাঠানো হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে চিকিৎসকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলেই হাসপাতালে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসবেন।’
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ হোসেন জানান, ‘রায়পুর হাসপাতালের ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ শূন্য পদগুলোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চাহিদাপত্র পাঠানো হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা পাচ্ছি না। হাসপাতালে অতি দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন।’
মন্তব্য করুন