কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ সফরে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান ইইউ’র প্রতিনিধি দল। বেলা ১১টার দিকে উখিয়ার মধুরছড়া ক্যাম্প-৪ আশ্রয় শিবিরে যান তারা।
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আশ্রয়শিবিরে পৌঁছালে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইইউর মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইয়ামোন গিলমোর।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিধিদলটি ক্যাম্প-৪ ও ক্যাম্প-১৮ আশ্রয়শিবিরে জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর পরিচালিত রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম, ইউনিসেফ পরিচালিত লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম,বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) পরিচালিত ই-ভাউচার সেন্টার পরিদর্শন করেন।
বেলা ১টার দিকে ক্যাম্প-৪ আশ্রয় শিবিরে ইউএনএইচসিআরের কমিউনিটি সেন্টারে অন্তত ১৫ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সভায় অংশ নেওয়া রোহিঙ্গা নেতারা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন, হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, সম্পদ লুটের বিবরণ তুলে ধরে রোহিঙ্গাদের মর্যদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের দাবি জানান।
তারা আরও বলেন, চীনের মধ্যস্থতায় পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা চলছে। কিন্তু রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। ফিরে যাওয়ার আগে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যার ভূমিকা নিতে হবে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে। এসব বিষয় নিশ্চিত হলে মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা ফিরতে আগ্রহী।
বৈঠকে রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় প্রতিনিধি দলের কাছে। বলা হয়, রোহিঙ্গা প্রতি পরিবারের জন্য ১০ ডলার করে সাহায্য দেওয়া হতো। তা কমিয়ে এখন আট ডলার দেওয়া হয়। যা দিয়ে রোহিঙ্গা পরিবারের চলতে কষ্ট হচ্ছে। বৈঠকে আশ্রয়শিবিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি,রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর সুরক্ষা, রোহিঙ্গা শিশুর লেখাপড়া, নারী শিশু পাচার নিয়েও আলোচনা করা হয়।
রোহিঙ্গা নেতা কামাল আহমদ বলেন, সম্প্রতি আশ্রয়শিবিরে হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি, অপহরণ ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ বেড়ে গেছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এসব অপরাধীদের ধরতে ইইউ এর প্রতিনিধি দলের কাছে দাবি জানান তারা।
বেলা দেড়টার দিকে ইইউর প্রতিনিধি দল আশ্রয়শিবিরের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম পরিচালিত রোহিঙ্গাদের কালচারাল সেন্টার পরিদর্শন করেন।
প্রতিনিধি দলে রয়েছেন, ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) রাজনৈতিক উপদেষ্টা ভিক্টর ভেলেক, ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলিও ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) সেবাস্টিয়ান রিগার-ব্রাউন ও বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক কর্মসূচির তত্ত্বাবধানকারী আনা অরল্যান্ডিনি।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলটি সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছে সরাসরি উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে যান। সেখানে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কাযক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজার আরআরআরসি কার্যালয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধি দল মতবিনিময় সভা করেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর। গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি।
মন্তব্য করুন