নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরএলাহী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন তোতাকে (৬৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকার ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজনৈতিক পূর্বশক্রতার জেরে এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলার চরএলাহী বাজারে হামলার ঘটনা ঘটে।
নিহতের বড় ছেলে ইব্রাহীম তোতা জানান, গত মঙ্গলবার রাতে আমার বাবা চরএলাহী বাজারে তার ব্যক্তিগত অফিসে বসেছিলেন। এ সময় চরএলাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন ও চরএলাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন এবং বর্তমান চরএলাহী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আমার বাবার অফিসে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা বাবার মাথায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল আগ্নেয়াস্ত্র হাতে আমার ভগ্নিপতি মিজানের দোকানেও হামলা চালায়।
তিনি জানান, বিএনপি নেতা ইসমাইল শেখ হাসিনা সরকার পতন হওয়ার পর থেকে তার স্বপ্ন ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার। এ জন্য আ.লীগ সমর্থিত রাজ্জাক চেয়ারম্যানের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করে বাবাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর তারা বাবাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।
নিহত চেয়ারম্যান তোতার মেয়ের জামাই মো. মিজানুর রহমান জানান, ঘটনার সময় রাতে বাজারে চরএলাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মেম্বারের নেতৃত্বে এলাকায় ত্রাণ বিতরণ উপলক্ষে আনন্দ মিছিল করে। মিছিল শেষে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামসহ আরও ৪0-৫০ জন সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র হাতে আমার শ্বশুরের অফিসে ঢুকে মাথায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে তিনি ঢাকার ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মিছিলে বিএনপি নেতারা আ.লীগের অস্ত্রধারীদের ঢুকিয়ে পরবর্তীতে হামলা চালায়।
স্থানীয়রা জানান, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ অনুসারী আব্দুর রাজ্জাক চেয়ারম্যান। কাদের মির্জার ছত্রছায়ায় চরএলাহী ইউনিয়নের উড়িরচরের প্রায় ১১০০ একর খাস জায়গা ভুয়া ভূমিহীন সাজিয়ে রাজ্জাক বিক্রি করে দেয়। চরএলাহী ইউনিয়ন থেকে শুধু খাস জায়গা বিক্রি করে গত ১৩ বছরে রাজ্জাক চেয়ারম্যান হাতিয়ে নিয়েছেন ২৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালে চরএলাহী ইউনিয়নে ১৫ টাকা চালের ভিজিএফ কার্ড জনপ্রতি ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এভাবে প্রায় ১ হাজার নিরীহ জনগণের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা আদায় করে। চরএলাহী ১, ৩, ৪, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে কোড বেড়ি নির্মাণ কাজ চলছে রাজ্জাক চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে। এ বাঁধ নির্মাণেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে।
তারা আরও জানান, রাজ্জাক এক সময় রিকশা চালালেও এখন থাকেন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন পাকা ভবনে। চলাফেরা করেন অর্ধকোটি টাকার গাড়িতে। এই ইউনিয়নের মাদক ব্যবসা, ঘাট সব নিয়ন্ত্রণ করে রাজ্জাকের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ইয়াবা আলমগীর ও চরএলাহী ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আবুল কালাম। নামে-বেনামে সম্পদ গড়েছেন জেলা শহর মাইজদী ও চট্টগ্রামে। এর মধ্যে মাইজদী ইসলামিয়া রোডে রয়েছে ফ্ল্যাট।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্তদের মুঠোফোনে কল করা হলও তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান, তোতা চেয়ারম্যানের মৃত্যুর খবর পেয়ে তারা সবাই গা ঢাকা দিয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি প্রণব চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন