টঙ্গী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৫ পিএম
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৯ জনের নামে হত্যা মামলা

তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। ছবি : সংগৃহীত
তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। ছবি : সংগৃহীত

টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হতাহত হওয়ার ঘটনায় ২৯ জনের নামে হত্যা মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী এস এম আলম হোসেন বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও কয়েক শ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী এস এম আলম হোসেন কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার গাইটাল গ্রামের মৃত এস এম মোক্তার হোসেনের ছেলে। তিনি জুবায়েরের অনুসারী এবং কিশোরগঞ্জের আলমি শুরার সাথি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দর হাবিবুর রহমান বলেন, তদন্তের স্বার্থে মামলায় অভিযুক্তদের নাম এ মুহূর্তে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

মামলায় আসামিরা হলেন ঢাকার ধানমন্ডি থানার আবাসিক এলাকার মৃত রিফকুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, খুলনার বাটিয়াঘাটা উপজেলার বড় কড়িয়া গ্রামের মনসুর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ মনসুর, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের ছেলে ওসামা ইসলাম আনু, একই এলাকার ড. কাজী এরতেজা হাসান, উত্তরা এলাকার মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে মোয়াজ বিন নূর, সাভার থানা এলাকার জিয়া বিন কাশেম, তুরাগ থানা (বেলাল মসজিদ) এলাকার আজিমুদ্দিন, সাভার থানার সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, মুগদা থানা (বড় মসজিদ) এলাকার শফিউল্লাহ, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজরা এলাকার মৃত মাওলানা মোজাম্মেলুল হকের ছেলে আনাস, মোহাম্মদপুর থানা এলাকার আব্দুল্লাহ শাকিল, রমনা থানার কাকরাইল এলাকার রেজা আরিফ, উত্তরা পশ্চিম থানার (সেক্টর-৯) আব্দুল হান্নান, একই থানার (সেক্টর-১১) রেজাউল করিম তরফদার, তুরাগ থানার (বেলাল মসজিদ) এলাকার মুনির বিন ইউসুফ, ঢাকার সায়েম, হাজী বশির সিকদার, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে মনির হোসেন, মীরপুর থানা এলাকার প্রকৌশলী মুহিবুল্লাহ, ঢাকার পল্লবী থানা এলাকার আজিজুল হকের ছেলে আতাউর রহমান, এলিফ্যান্ট এলাকার তানভীর, তুরাগ থানার ভাটুলিয়া এলাকার মৃত ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে বাবুল হোসেন, একই থানা এলাকার প্রকৌশলী আবুল বশর, প্রকৌশলী রেজনুর রহমান, উত্তরা থানার (সেক্টর ১০) মৃত ফজলুল হক সিকদারের ছেলে নাসির উদ্দিন সিকদার, ড. আব্দুস সালাম, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওয়াসি উদ্দিন, রাজধানীর মীরপুর থানা এলাকার মিজান, তুরাগ থানার (বেলাল মসজিদ) এলাকার শাহাদাতসহ কয়েক শ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, উল্লেখিত আসামিরা মাওলানা সা’দ কান্ধলাভীর অনুসারী। গত ৪ ও ৭ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় বাধা দিয়ে ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য চেষ্টা করে। তারা সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে সরকারি সিদ্ধান্তবহির্ভূত আগামী ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানে সা’দপন্থিদের জোড় করার মর্মে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা করতে থাকে। মামলার প্রধান আসামি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম তার সই করা চিঠির মাধ্যমে সারা দেশের সা’দপন্থিদের জানান যে আগামী ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানেই পুরনোদের জোড় হবে। ওই চিঠিতে পুরনো সাথিদের সঙ্গে মোনাসেব সাথিদেরও নিয়ে আসে এবং তাদের সঙ্গে যেন টর্চলাইট ও হ্যান্ডমাইক থাকে।

মামলার ২ নম্বর আসামি আব্দুল্লাহ মনসুর ফেসবুক লাইভে ঘোষণা দেন, পুরনোদের জোড়ে এবং বিশ্ব ইজতেমায় যদি মাওলানা সা’দ সাহেবকে আনতে দেওয়া না হয় এবং তাদের যদি টঙ্গী ময়দানে ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর জোড় করতে দেওয়া না হয়, তাহলে তারা সরকারের সিদ্ধান্তমতে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব হতে দেবে না।

তাদের এসব উসকানিমূলক বক্তব্য বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে ঘুমন্ত ও পাহারারত আলমি শুরার সাথিদের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দু গ্রামের মৃত ওসমান গণির ছেলে আমিনুল ইসলাম বাচ্চু (৬৫), ফরিদপুর সদর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মৃত শেখ সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৬০) এবং বগুড়া সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়া গ্রামের ওমর উদ্দিনের ছেলে তাজুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, স্টেশন রোড, মুন্নু গেট ও কামারপাড়া সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। সেনাবাহিনী, র‍্যাব, বিজিবিসহ পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। ইজতেমা মাঠের ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

এদিকে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কিছু মুসল্লি মাঠে অবস্থান করছেন। তারা দাবি করছেন, ইজতেমা মাঠের মালামাল পাহারা দেওয়ার জন্য তারা মাঠে রয়েছেন।

মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের পক্ষে থাকা মুসল্লি খায়রুল বাশার বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ও মুরব্বিদের নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠে এসেছি। প্রায় ৫০০ সাথি মাঠে মালামাল পাহারা দিচ্ছেন।’

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাঠে জুবায়ের অনুসারীদের ৫০০ লোক মালামাল পাহারা দেওয়ার জন্য থাকতে পারবে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কারচুপি হলে বাংলাদেশ অচল করে দেবে ছাত্রদল: রাকিব

সোহরাওয়ার্দী হলে ভিপি-জিএসে এগিয়ে শিবির

সোহরাওয়ার্দী হলে পুনরায় ভোট গণনার দাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

আরেক হলের ফল ঘোষণা, তিন পদেই এগিয়ে ছাত্রদল

হাসপাতালে খালেদা জিয়া

ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন গ্রেটা থুনবার্গ

চবিতে মুখোমুখি অবস্থানে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির

চাকসুর ফল কারচুপির চেষ্টার অভিযোগে শাহবাগে ছাত্রদলের অবস্থান

৩১ দফা বাস্তবায়নে / বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী সোহাগের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ

চবিতে ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

১০

সেনা হেফাজতে থাকা কর্মকর্তাদের বিচার নিয়ে ভলকার তুর্কের আহ্বান

১১

বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাল জামায়াত

১২

চাকসু নির্বাচনে আরেক হলের ফল ঘোষণা, ভিপি পদে এগিয়ে ছাত্রদল

১৩

গোমতীর চরে আগাম সবজির চাষ, অধিক লাভের আশা কৃষকের

১৪

নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে কেশবপুরের তপস্যা

১৫

গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, স্বামী পলাতক

১৬

ইন্দোনেশিয়ায় তেলবাহী ট্যাঙ্কারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ১০

১৭

রাত থেকে লাইনে নারী-পুরুষ, সকালে মেলে আটা

১৮

ওসিকে অপসারণে শিক্ষার্থীদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

১৯

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

২০
X