পুকুরটি কাগজপত্রে ব্যক্তিমালিকানাধীন। দুই দশক পূর্বে সেটি কয়েকজনের কাছে বিক্রি করেন বুলু মিয়া। বুলুর হিসেবে পরিচিত এ পুকুরকে গত কয়েক মাস থেকে প্রথমে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিত্যক্ত জায়গার মতো তৈরি করা হয়। এরপর টানা পাঁচ থেকে ছয়মাস রাতের আঁধারে বালু ফেলে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে।
সরেজমিন তদন্তে এ বিষয়টির সত্যতা পেয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় একটি মামলা করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা।
ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার ফতেহপুর মৌজার টিএণ্ডটি রোড ও পোস্টঅফিস রোডের সংযোগস্থলে। গত সোমবার (১২ মে) মামলাটি দায়ের করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিয়ানীবাজার থানার ওসি মো. আশরাফ উজ্জামান। তবে ওই ঘটনায় কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি।
মামলার আসামিরা হলেন- পৌর এলাকার নবাং গ্রামের আব্দুর রশীদ, আব্দুস সবুর, আব্দুল হাই, আব্দুল ফাত্তাহ, করিমুন নেছা, ফয়সল আহমদ ও জয়নাল মিয়া; তিলপাড়া ইউনিয়নের মাটিজুরা গ্রামের ফরিদা ইয়াসমিন, পৌর এলাকার সুপাতলা গ্রামের সাহাব উদ্দিন সাবু এবং মাথিউরা সায়নুল ইসলাম। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে মামলাটি করেন পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা। তিনি কালবেলাকে জানান, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে মামলাটি করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, মামলাটি পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অভিযোগ পেয়ে ১৯ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুকুর ভরাটের সত্যতা মেলে। এ অবস্থায় পুকুর ভরাট বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট একজনকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপরও রাতের আঁধারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পুকুর ভরাটের কাজ অব্যাহত রাখেন।
এ অবস্থায় গত ৮ মে রাত ১১টার দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা পুকুর ভরাটে বাঁধা দেন। এসময় পুকুর ভরাটে ব্যবহৃত দুটি ট্রাক নিয়ে চালকেরা পালিয়ে যান। তবে দুটি মোটরসাইকেল ফেলে যান। উপস্থিত লোকজন মোটরসাইকেলগুলো বিয়ানীবাজার থানায় হস্তান্তর করেন। পুলিশ তৎক্ষণাৎ মোটরসাইকেল দুটি জব্দ করে। গত শনিবার বাদী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুকুর ভরাটের সত্যতা পেয়ে থানায় মামলা করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, পুকুরটি বড় ও গভীর ছিল। জমির মালিকেরা ইচ্ছে করে সেখানে ময়লা ফেলে অংশবিশেষকে পরিত্যক্ত করে ধীরে ধীরে ভরাটের উপযোগী করেন। চার থেকে পাঁচ মাস ধরে রাতের অন্ধকারে পুকুরটি ভরাট করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার প্রশাসক গোলাম মোস্তফা মুন্না কালবেলাকে জানান, স্থানীয়দের সহায়তায় পুকুর ভরাটের খবর পেয়ে প্রথমে বালু ভরাট কাজ বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা জানিয়ে নোটিশ পাঠানো হয়। সেই নির্দেশনা অমান্য করে কয়েকদিন পর পুনরায় পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে জানার পর পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
মন্তব্য করুন