শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৫, ০৮:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বড়লেখা সীমান্তে বিএসএফের পুশইন ঠেকাতে কঠোর বিজিবি  

পুশইন ঠেকাতে বড়লেখার বিভিন্ন সীমান্তে কঠোর অবস্থানে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়ন। ছবি : কালবেলা
পুশইন ঠেকাতে বড়লেখার বিভিন্ন সীমান্তে কঠোর অবস্থানে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়ন। ছবি : কালবেলা

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত চলাকালীন সীমান্ত এলাকা দিয়ে নীরবে ‘পুশইন’ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত দুই সপ্তাহে মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে এ পর্যন্ত ১১৯ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। এদিকে সীমান্তে পুশইন ঠেকাতে বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন ১১৪ কিলোমিটারজুড়ে বাড়তি সদস্য মোতায়েন করার পাশাপাশি আনসার ও স্থানীয় জনগণের সহায়তায় কঠোর নজরদারি চলছে।

জুড়ী উপজেলার রাজকী বিওপি থেকে বড়লেখা উপজেলার সীমান্ত হয়ে বিয়ানীবাজারের গজুকাটা বিওপি পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। সীমান্তের অনেক জায়গায় নেই তারকাটার বেড়া। গহিন অরণ্যের মধ্যে সীমান্ত দিয়ে বিজিবির টহল টিমের চোখ ফাঁকি দিয়ে কয়েক দিন ধরে বিএসএফ অবৈধভাবে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিকে ধরে ধরে পুশইন করছে।

গত শুক্রবার (১৬ মে) পর্যন্ত শুধু বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে পুশইনের মাধ্যমে আসা ১১৯ জনকে আটক করেছে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়ন।

জানা গেছে, সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) অপতৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলছে। কয়েক দিন ধরেই পুশইনে ব্যস্ত তারা। বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলা ভাষাভাষীদের ধরে সীমান্তে জড়ো করছে। তারপর সুযোগ পাওয়া মাত্রই ধরে আনা লোকদের বাংলাদেশে পুশইন করছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৬ মে) সকালে উপজেলার নিউ পাল্লাথল সীমান্ত দিয়ে আরও ১৬ জনকে পুশইন করেছে তারা। এই ১৬ জনের সবাইকে আটক করেছে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়ন। এর মধ্যে ১৪ জন নারী, ২ জন পুরুষ।

এর আগে গত বুধবার (১৪ মে) ভোরের দিকে লাতু ও পাল্লারথল সীমান্ত দিয়ে ৪৪ নারী-পুরুষকে পুশইন করে বিএসএফ এবং ৬ ও ৭ মে আরও ৫৯ নারী, পুরুষ ও শিশুকে পুশইন করেছিল বিএসএফ।

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের পরিচয় শনাক্ত করে বড়লেখা থানা পুলিশের মাধ্যমে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের অনেকেই যশোর, বাগেরহাট, নড়াইল, বরগুনাসহ অন্যান্য এলাকার বলে জানা গেছে।

আটকরা জানান, ভারতের গুজরাটে বাঙালি কলোনি নামে একটি কলোনি ছিল। সেই কলোনি ভেঙে দিয়ে তাদের গুজরাট থেকে বিমানে করে প্রথমে ত্রিপুরায় নিয়ে আসেন বিএসএফ সদস্যরা। তারপর একঘণ্টা হাঁটিয়ে সীমান্ত দিয়ে এপারে ঠেলে দেয়। এছাড়াও তারা দীর্ঘদিন ভারতে বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছিলেন। সম্প্রতি সে দেশের পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর সুযোগ মতো বিএসএফ তাদের পুশইন করলে স্থানীয়রা দেখে বিজিবিকে খবর দেন। পরে বিজিবি এসে তাদের আটক করে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পুলিশে হস্তান্তর করে।

এদিকে গত সপ্তাহ থেকে বিজিবি সীমান্তে টহল জোরদার করে। বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালায়। নিরাপত্তা জোরদারের মধ্যেও গত সাত দিন অর্থাৎ ১৭ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত সীমান্তে কোনো নাগরিককে পুশইনের খবর পাওয়া যায়নি। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করলেও কীভাবে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বিএসএফ মানুষকে ধরে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

অন্যদিকে আটকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সীমান্তের ওপারে আরও কয়েক হাজার অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করার প্রস্তুতিতে রয়েছে বিএসএফ। এমন তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় দিবা ও রাত্রিকালীন টহল জোরদার করেছে।

সরেজমিনে বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর, কুমারশাইল, নিউ পাল্লাথল, বোবারথল, বিয়ানীবাজারের শেওলা, গজুকাটা, জুড়ী উপজেলার ফুলতলা, রাজকী সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের অত্যন্ত সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। সীমান্ত এলাকার রাস্তাঘাটে চলাচলকারী যানবাহন তল্লাশি করতেও দেখা যায়।

বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান পিপিএম জানান, গত ১ মে’র পর থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে পুশইন হওয়া ১১৯ জনকে আটক করেছে বিজিবি। আটকদের পরিচয় যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সীমান্তে নজরদারি আগের তুলনায় বহুগুণে বাড়ানো হয়েছে। ৫২ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন ১১৪ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে বিজিবি, আনসার ও স্থানীয় জনগণের সহায়তায় কঠোর নজরদারি চলছে। পাশাপাশি বিএসএফ যেন কোনোভাবে অবৈধভাবে বাংলাদেশে পুশইন না করতে পারে, সেজন্য পূর্বের তুলনায় বাড়তি বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এবং বিজিবি সদস্যরা নিয়মিত সভা করছেন স্থানীয়দের সঙ্গে, চালাচ্ছেন সচেতনতামূলক প্রচারণা। পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রয়েছে স্থানীয় আনসার ও সাধারণ মানুষও। তবে এ পর্যন্ত বড়লেখা উপজেলার লাতু, বোবা ও পাল্লাথল সীমান্ত দিয়ে আটকের সংখ্যা দাঁড়াল ১১৯ জনে।

বড়লেখা থানার ওসি আবুল কাশেম সরকার জানান, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশিরভাগই যশোর, নড়াইল, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট ও বরগুনাসহ অন্যান্য জেলার বাসিন্দা। তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। বিএসএফ তাদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক নিয়ম ভঙ্গের শামিল। আটকদের থানায় আনার পর তাদের পরিবারের সদস্যদের খবর দিয়ে জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কৃষকের সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক দ্বার খুলতে পারে বায়োচার

জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখার আহ্বান ছাত্রশিবিরের

বিএনপিকে ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা

যাত্রাবাড়ী পার্কে ককটেল বিস্ফোরণ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক শনিবার

আড়াইহাজারে শহীদ নাহিদের পরিবারের পাশে নজরুল ইসলাম আজাদ

নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে আদিবাসী গোষ্ঠীর মামলা

পিনাকী, ইলিয়াস ও কনকের ঐক্যবদ্ধ আহ্বান

সকাল ৯টার মধ্যে ১০ জেলায় ঝড়ের আশঙ্কা

খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, আ.লীগ নেতার মৃত্যু

১০

কাপ্তাই হ্রদে পানির অভাব, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপর্যয়

১১

ছাগলের দৌড় দেখতে হাজারো মানুষের ভিড় 

১২

দুদকের সাবেক ৩ চেয়ারম্যানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা

১৩

সৌদিতে ফ্ল্যাটে মিলল দুই ভাইয়ের মরদেহ, পরিবারে শোকের ছায়া

১৪

পাল্টাপাল্টি আকাশপথ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়াল ভারত-পাকিস্তান

১৫

জাতীয় নির্বাচন দাবি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতার পদত্যাগ

১৬

সাবেক ওসি প্রদীপের ফাঁসি কার্যকর দাবিতে প্রচার, যা জানা গেছে

১৭

দেশ নিয়ে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের প্রেসক্রিপশনে পরিকল্পনা চলছে : জুলাই ঐক্য

১৮

ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে অনশন, হাসপাতালে দুই

১৯

সান্ডা থেকে গাধা : মানুষের তামাশায় প্রাণীরাও আজ নিরাপদ নয়!

২০
X