পবিত্র ঈদুল আজহায় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় পশুর হাট মাতাবে ‘রাজাবাবু’। এখনো ঈদ বাজার শুরু না হলেও পশু পালনকারীর বাড়িতেই বিশালাকৃতির অস্ট্রেলিয়ান হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় রাজাবাবুকে দেখতে আসছেন উৎসুক দর্শনার্থী ও ক্রেতারা।
রাজাবাবুর বয়স তিন বছর। ষাঁড়টির ওজন ২০ মণ বলে দাবি করছেন গৃহস্থ মনির হোসেন। তার দাবি এবারের কোরবানির ঈদে এই অঞ্চলের হাতেগোনা কয়েকটি ষাঁড়ের মধ্যে রাজাবাবু অন্যতম। তাই তিনি রাজাবাবুর দাম হাঁকাচ্ছেন ৬ লাখ টাকা।
গৃহস্থ মনির হোসেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের বেজুরা শ্মশানখলা এলাকার আলি মন্দের বাড়ির মো. ধনু মিয়ার ছেলে। তিনি খামারি না হলেও প্রতি বছর কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য উন্নত জাতের গরু পালন করে থাকেন। এ বছরও তিনি কোরবানির ঈদ বাজারে বিক্রির জন্য রাজাবাবুকে প্রস্তুত করেছেন।
রোববার (২৫ মে) বিকেলে সরেজমিনে মনিরের বাড়িতে দেখা যায়, একটি টিনের বেড়ার ঘরে মোটা রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে রাজাবাবুকে। কাঁচা ঘাস খাচ্ছে সে। মাঝেমাঝে তাকাচ্ছে এদিক-ওদিক। তার বিশাল দেহের কারণে কাছাকাছি যেতে সাহস হচ্ছে না কারোর। তবে মালিক মনির হোসেনের মধ্যে নেই সেই ভয়। তিনি যেভাবে ইচ্ছা রাজাবাবুকে ধরছেন, রাজাবাবু ভ্রুক্ষেপও করছে না।
মনির হোসেন জানান, তিনি সংসারে সুদিন ফেরাতে একসময় প্রবাসজীবন পার করেছেন। প্রবাসে থেকেও তিনি জীবন-মান উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। পরে দেশে ফিরে তিনি কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন। কৃষিকাজের পাশাপাশি শখ করে পশু পালন করছেন। এবার ঈদেও তার পোষা রাজাবাবু কোরবানির পশুর হাট কাঁপাবে বলে বিশ্বাস তার।
তিনি বলেন, আমার একটি অস্ট্রেলিয়ান হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের গাভি আছে। সেই গাভি থেকে অস্ট্রেলিয়ান হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের বাছুর জন্ম নেয়। সাদা-কালো ডোরাকাটা হওয়ায় বাছুরটি দেখতে বেশ সুন্দর লাগছিল। আমার মা খুশি হয়ে আদর করে তার নাম রাখে রাজাবাবু। বাছুরটিকে তিল তিল করে বড় করেছি। এর বয়স এখন তিন বছর। ওজন ২০ মণ। ক্রেতা আসছে, তবে দরদামে বনছে না। বর্তমান বাজারে বড় গরুর ক্রেতা কম।
তিনি আরও বলেন, গত তিন বছরে পরিবারের সদস্যের মতোই পরম আদর-যত্ন করে বাছুর থেকে বিশালদেহী ষাঁড়ে পরিণত করা হয়েছে রাজাবাবুকে। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার টাকার খাবার খাওয়ানো হয় রাজাবাবুকে। খাবার হিসেবে গত তিন বছর ধরে নিজের জমিতে ফলানো ঘাস, ছোলা, সয়াবিনের ভুসি, কলুই ভুসি, ধানের কুঁড়া, শুকনো খড় খাইয়ে প্রাকৃতিকভাবে রাজাবাবুকে বড় করা হয়েছে। পশু মোটাতাজাকরণের কোনো পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়নি। এজন্য এর মাংস সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত হবে। আমি রাজাবাবুকে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চাইছি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছেন, এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির জন্য খামারি ও গৃহস্থরা ৮ হাজার ৭৬৪ গবাদিপশু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে গরু ৭ হাজার ৪৩৮টি, মহিষ ৫টি, ছাগল ১ হাজার ৩২৩টি রয়েছে। এবার চাহিদার চেয়েও অতিরিক্ত কোরবানি যোগ্য গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।
মন্তব্য করুন