পাহাড়, পর্বতে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি এখন পর্যটকদের কলকাকলীতে মুখর। তীব্র গরম উপেক্ষা করে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসছেন এই খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার নানা দর্শনীয় স্থানে। এতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে স্থানীয় পর্যটন খাত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও হোটেল-মোটেল শিল্প।
মাটিরাঙ্গার আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝরনা, তারেং, জল পাহাড়, শতবর্ষী বটগাছ, ভগবান টিলাসহ নানা পাহাড়ি পথজুড়ে পর্যটকদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। এসব স্থানে রয়েছে ছোট ছোট দৃষ্টিনন্দন ঝরনা ধারা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব স্পটে থেমে থেমে আসছেন পরিবার, বন্ধু কিংবা অফিস সহকর্মীদের সঙ্গে ছুটি উপভোগ করতে আসা মানুষজন।
এদিকে, শহরের কোলাহল ছেড়ে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে তাইন্দং এলাকার বিস্তীর্ণ টিলা-পাহাড় ও সমতল মিলনস্থলে এক খণ্ড জমিতে চা-বাগানটি ওই এলাকায় পর্যটন শিল্পের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যটকদের উপস্থিতিতে যেমন মুখর খাগড়াছড়ির পাহাড়-ঝরনা, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতিতেও লেগেছে প্রাণের ছোঁয়া। প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের স্বপ্নের গন্তব্য হয়ে উঠছে খাগড়াছড়ি।
পর্যটকদের অনেকে বলছেন, পাহাড়ে যে এতটা অপার সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে, তা খাগড়াছড়িতে না এলে বিশ্বাস হতো না। কেউ কেউ আবার টানা কয়েকবার এসে ঘুরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। বিশেষ করে নিরাপদ ভ্রমণ ও স্থানীয়দের আন্তরিক ব্যবহার পর্যটকদের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর শীত মৌসুম ও ছুটির সময়ে পর্যটকদের ভিড়ে দোকানপাট, হস্তশিল্প, রেস্টুরেন্টসহ নানা ব্যবসা ভালো চলে। এ সিজনে বেশ গরম বিধায় পর্যটক তুলনামূলক কম। তবে এই গরমে ঠান্ডা কোমল পানীয়ই একমাত্র ভরসা।
ঘুরতে আসা পর্যটক জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা চট্টগ্রাম থেকে আসছি। বেশ গরম বিধায় কিছু ভালো লাগতেছে না। ছায়ায় বসে আছি। একটু পর চলে যাব রিসাং ঝরনায়। ওখানে ইচ্ছেমতো ভিজবো। গোসল করব। তারপর খাগড়াছড়িতে একরাত যাপন করব।
শিহাব উদ্দিন ডাবের পানি খেতে খেতে বলেন, আমি ঢাকা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আসছি। বেশ ভালো লেগেছে। তবে অতিরিক্ত গরম। গরমে খারাপ লাগছে না। আর একটুখানি থাকব। রাতের দিকে এ স্থান ত্যাগ করব।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও স্থানীয় পর্যটন উদ্যোক্তারা মনে করছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে খাগড়াছড়িকে দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন হাব হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনজুর আলম কালবেলাকে বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবার মান নিশ্চিত করতে প্রশাসন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। মাটিরাঙ্গার জনপ্রিয় স্পটগুলোতে পুলিশ টহল চালু রয়েছে। পর্যটকদের চলাচলের সুবিধার্থে সাইনবোর্ড, টয়লেট, বিশ্রামাগার ও প্রয়োজনীয় সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে।
মন্তব্য করুন