নিম্নচাপের প্রভাবে ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠছে সাগর। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। মেরিন ড্রাইভ রক্ষায় জিও ব্যাগ ব্যবহার করলেও মুহূর্তেই তা তলিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে ঝুঁকিতে পড়েছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। লঘুচাপের তীব্র প্রভাবে দ্বীপটির উত্তর-পশ্চিমাংশে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ধরেছে দ্বীপরক্ষার গাইড ওয়ালে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়া ঘাট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের অন্তত ১৫টির বেশি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এতে যান চলাচলে বেড়েছে দুর্ভোগ এবং রয়েছে ঝুঁকিও। এ ছাড়া ফতেআইল্যে পাড়া এলাকায় মেরিন ড্রাইভের পশ্চিম পাশে বসানো জিও ব্যাগের বাঁধ ধসে পড়েছে। এর বাইরে কিছু এলাকায় সড়ক ভেঙে পূর্ব পাশে চাষের জমিতে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাঙনের কারণে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এখানে কয়েক হাজার একর জমিতে চাষাবাদ হয়। সেগুলোতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়লে ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। সড়ক পুরোপুরি ভেঙে গেলে পাশের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তাদের অভিযোগ, মেরিন ড্রাইভে ভাঙনের পেছনে একটি বড় কারণ জায়গা ভরাটে সমুদ্র থেকে বালু তোলা। ট্যুরিজম পার্ক গড়ে ওঠায় জমির দাম বাড়ায় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু তুলে জমি ভরাট করছেন। এতে সড়কের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে। একটু বড় ঢেউ এলেই সড়ক ভাঙছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা ও সাংবাদিক আবদুল মালেক কালবেলাকে বলেন, মৌসুমি লঘুচাপের প্রভাবে সেন্টমার্টিনে স্বাভাবিক জোয়ারের চাইতে দুই থেকে তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে প্রবাল দ্বীপটির অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাগর উত্তাল থাকায় প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে দ্বীপের উত্তর-পূর্বাংশের অনেক পাকা স্থাপনার গাইড ওয়াল ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া দ্বীপের জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপটি কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের পূর্ব-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় এক থেকে তিন ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস এবং দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। এর ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, মেরিন ড্রাইভ সড়কটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইসিবির তত্ত্বাবধানে রয়েছে। টেকনাফ অংশে ভাঙনের খবর পেয়েছি। ইসিবি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মন্তব্য করুন