বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২
মহিপুর (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০২:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আড়তে মেলে ইলিশ, পাতে ওঠে না সবার

আড়তে বিক্রির জন্য রাখা ইলিশ মাছ। ছবি : কালবেলা
আড়তে বিক্রির জন্য রাখা ইলিশ মাছ। ছবি : কালবেলা

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানায় অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্যবন্দর আলিপুর-মহিপুর ঘাটে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ। তবে দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় তা মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ইলিশ যেন তাদের কাছে সোনার হরিণ।

সরেজমিন ঘুরে আলিপুর-মহিপুর মৎস্য বন্দরে গত কয়েকদিনে বেশ ভালো পরিমাণ ইলিশ মাছ দেখা গেছে। তবে ইলিশের সাইজ কিছুটা ছোট।

ইলিশ প্রসঙ্গে কথা হলে এনজিওকর্মী রেশমা আক্তার বলেন, সারা বছর তো ইলিশ চোখেও দেখি না। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ইলিশের দাম কিছুটা কম থাকায় ইলিশ কিনে পরিবার নিয়ে দু-একবার স্বাদ নিতাম। বাজারে গিয়ে দাম শুনেই ফিরে আসতে হয়। আমাদের মতো মধ্যবিত্তের জন্য ইলিশ এখন স্বপ্নের খাবার হয়ে গেছে।

কাঁকডাকা ভোর থেকে শুরু হয় মাছ কেনা-বেচার এক বিশেষ উৎসব। বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে ফেরা ট্রলারভর্তি ঝলমলে রুপালি ইলিশ নামানো হয় আড়তে, আর সঙ্গে সঙ্গেই বেজে ওঠে হাঁকডাক, দর কষাকষি আর নিলামের তুমুল প্রতিযোগিতা। সূর্য ওঠার আগেই লাখ লাখ টাকার মাছ হাতবদল হয়। কিন্তু বাজারে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সেই ইলিশের দাম চলে যায় সাধারণ মানুষের নাগালের অনেক বাইরে।

অটোরিকশাচালক সুমন দাস বলেন, ইলিশ বাঙালির জাতীয় মাছ, কিন্তু এখন সেটা যেন ধনী মানুষের একচেটিয়া খাবার হয়ে গেছে। আমরা মধ্যবিত্তরা শুধু খবরেই শুনি—ফলাও ইলিশের মৌসুম এসেছে। কিন্তু পাতে ইলিশ ওঠে না।

সূর্য ওঠার মুহূর্তেই বন্দরে লেগে যায় সরগরম পরিবেশ। প্রথমেই ধুয়ে-মুছে ঝকঝকে করা হয় আড়তগুলো। এরপর ট্রলার থেকে নামানো হয় রুপালি ইলিশ। সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যেই নিলামস্থল ভরে ওঠে শত শত পাইকারে।

সম্প্রতি ‘এফবি আল্লাহর দোয়া’ নামের একটি ট্রলার ৬১ মণ ইলিশ নিয়ে বন্দরে ফিরে। আড়ত ‘খান ফিসে’ সেই মাছ বিক্রি হয় ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার ৭০৪ টাকায়। বড় সাইজের (৯০০-১০০০ গ্রাম) ইলিশ মণপ্রতি ৭৩ হাজার, মাঝারি (৬০০-৮০০ গ্রাম) ৫৮ হাজার, আর ছোট (৪০০-৫০০ গ্রাম) ৪৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

নিলাম শেষ হতেই শুরু হয় প্যাকেজিং প্রক্রিয়া। ধোঁয়া বরফে মাছ সংরক্ষণ করে ট্রাকে তোলা হয়। এরপর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। পরিবহন ও মধ্যবর্তী পর্যায়ে একাধিক ধাপ ও খরচ যুক্ত হওয়ায় বাজারে পৌঁছে দাম আরও বেড়ে যায়, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়।

স্কুলশিক্ষিকা রুনা মাহমুদ বলেন, মাস শেষে হাতে যা থাকে, তাতে নিত্যপণ্যের দামই সামলানো মুশকিল। ইলিশ কেনা তো দূরের কথা, শুধু তাকিয়েই ফিরে আসতে হয়। আগে বছরে অন্তত একবার কিনতাম, এখন দুই বছরেও কিনতে পারছি না।

বেসরকারি চাকরিজীবী রিয়াজ হোসেন বলেন, বাচ্চারা ইলিশ ভাজা খেতে চায়; কিন্তু বাজারে গিয়ে দাম শুনে চুপচাপ চলে আসতে হয়।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা কালবেলাকে বলেন, বর্তমানে ইলিশের সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এখন দাম কিছুটা বেশি থাকলেও, সরবরাহ চলমান থাকলে আশা করি দাম কমে আসবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাদা পাথর উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু

বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে উয়েফা সুপার কাপে

স্বর্ণ পাচারে জড়িত সেই কেবিন ক্রু রুদাবা সাসপেন্ড

ইতালি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবে ২৬ জনের মৃত্যু

অফিসে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে কী করবেন 

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালককে গুলির পর কুপিয়ে হত্যা

হাজার কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস 

চৌকি কোর্টে অভিযোগের হেল্পলাইন চালু

রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

আ.লীগ পালিয়েছে ভারতে, আপনাদের পালাতে হবে পাকিস্তানে : টিপু

১০

গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনায় দুই কর্মকর্তাসহ ৮ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

১১

জামিন পেলেন বিএনপির ১৩ নেতাকর্মী

১২

বাংলাদেশে নিজের বিচার নিয়ে টিউলিপের প্রতিক্রিয়া

১৩

সেনাপ্রধানের নামে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট, আইএসপিআরের সতর্কবার্তা

১৪

সাদা পাথর বাঁচাতে ৫ দফা সিদ্ধান্ত প্রশাসনের

১৫

যুক্তরাষ্ট্রে বার্সা-ভিয়ারিয়ালের ম্যাচ নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের আপত্তি

১৬

টঙ্গীতে মানববন্ধনে হামলা, আহত ৫

১৭

গলায় চানাচুর আটকে শিশুর করুণ মৃত্যু

১৮

আরাফাত রহমান কোকোর জন্মবার্ষিকীতে লন্ডনে দোয়া মাহফিল  

১৯

ভারতে পিটুনিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক, লাশের জন্য ঘুরছে পরিবার

২০
X