ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে বুকে জেগে থাকা চেচুয়ার শাপলা বিল। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য আকর্ষণ। বর্ষার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গেই এ বিলের বুকে ছড়িয়ে পড়ে হাজার হাজার শাপলা ফুল। সকালে উদিত সূর্যের আভায় ফুটন্ত লাল শাপলা অপূর্ব সমাহারে গোটা বিল যেন রূপকথার রাজ্যে পরিণত হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শাপলার কচি পাপড়ি হেসে ওঠে রোদের মায়ায়। হালকা বাতাসে শাপলার দোল খাওয়া দৃশ্য যেন চোখ জুড়িয়ে দেয়। চারপাশে সবুজ শস্যক্ষেত আর বিলের মাঝে ভেসে থাকা ফুলের মেলা যেন এক অপূর্ব শান্তির অনুভূতি। প্রতিদিন অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু দূরদূরান্ত থেকে আসছেন এ পদ্মবিলের সৌন্দর্য দেখতে। শুক্র, শনিসহ সরকারি ছুটির দিনে দর্শনার্থীর ঢল নামে এখানে। বিলে মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে শাপলা। প্রায় ২০ একর আয়তনের এ বিলের প্রায় পুরোটাই শাপলা ফুটেছে। মনে হয় বিলজুড়ে শাপলার চাদর বিছানো।
যতদূর চোখ যায় শুধু শাপলা আর শাপলা, মাঝে মাঝে রয়েছে ঘাস আর কচুরিপানার ঝাঁক। পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা নৌকায় চড়ে বিলের ভেতরে ঢুকলে মনে হয় যেন বাতাসের তালে তালে শাপলারা নেচে নেচে ভ্রমণপিপাসুদের হাসিমুখে স্বাগত জানাচ্ছে। বিলের আশপাশের মানুষজন শাপলার ডাঁটা খাওয়ার উপযোগী অংশ বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেকে শাপলার ডাঁটা দিয়ে তৈরি করে সুস্বাদু ভর্তা, তরকারি কিংবা ভাজি। আবার বর্ষা মৌসুমে এই বিল স্থানীয় জেলেদের জন্যও আশীর্বাদস্বরূপ, কারণ এ সময় প্রচুর মাছ ধরা পড়ে।
বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা নৌকা ভাড়া করে বিলের ভেতরে গেলে দেখা যায় বাতাসের তালে তালে শাপলা দুলছে। যেন তারা স্বাগত জানাচ্ছে ভ্রমণপিপাসুদের। ঝলমলে সূর্যের আলো রাঙিয়ে দেয় শাপলা বিলকে। এ বিলের শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য রয়েছে হরেক রকম নৌকা। ভোর থেকেই শুরু হয় পর্যটকদের আনাগোনা। পর্যটকদের আনাগোনায় চাঙা হয়ে উঠেছে স্থানীয় অর্থনীতিও। বিলের কল্যাণে অনেক মাঝি পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় নৌকায় চড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাতেম আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ বিলে প্রাকৃতিকভাবে লাল শাপলা ফুটে চলছে। তা দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসছেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাতুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছর প্রথম আসলাম। আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। তবে এখানে পর্যটকদের জন্য যে নৌকা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে তাদের মধ্যে এক ধরনের সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য খুবই কষ্টকর পরিবেশ হচ্ছে। আমি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন রাখছি দ্রুত যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
লাল শাপলা প্রেমিক এস এম মাসুদ রানা বলেন, কয়েকদিন ধরে চেচুয়া বিলে আসার চেষ্টা করছিলাম। আজ ভোর সকালে চলে আসলাম। আজ এ বিলে এসে দেখতে পেলাম লাল শাপলার সঙ্গে অতিথি পাখিদের এ যেন এক মিলনমেলা বসেছে। সত্যিই এ দৃশ্য দেখে আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী বলেন, চেচুয়ার শাপলা বিল ত্রিশালের এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ ও পর্যটন কেন্দ্র। এর সৌন্দর্য রক্ষা এবং পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নৌকা ভাড়া ও অন্যান্য সেবায় শৃঙ্খলা আনতে কঠোর নজরদারিও থাকবে।
মন্তব্য করুন