পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু কোনো কাজে আসছে না। সংযোগ সড়ক ভাঙা থাকায় যানবাহন দিয়ে পার হওয়া তো দূরের কথা, সাধারণ পথচারীদেরও হাঁটুজল পেরিয়েই সেতুর ওপর উঠতে হচ্ছে। এতে এলাকাবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
গত রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের কামারপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুর পশ্চিম প্রান্তে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার রাস্তা ভেঙে খাল হয়ে গেছে। এতে কামারপাড়া, পাইকানপাড়া, কেপ্তিকুড়া গ্রামের মানুষকে গত প্রায় এক বছর সময় ধরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে কামারপাড়া থেকে কেপ্তিকুড়া গ্রামের চলাচলের পথে একটি বড় খাল থাকায় যাতায়াতে সমস্যা হয়। কিন্তু সেই খাল ভরাট না করেই গত বছর ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১ দশমিক ৫ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও এখনো এই সেতু দিয়ে কোনো ধরনের যানবাহন পারাপার সম্ভব হয়নি। সেতুর পশ্চিম প্রান্তে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার জায়গায় রাস্তা ভেঙে খাল হয়ে গেছে। ফলে কামারপাড়া, পাইকানপাড়া ও কেপ্তিকুড়া এলাকার মানুষকে বর্ষা মৌসুমে হাঁটুজল পেরিয়ে তবেই সেতুতে উঠতে হচ্ছে।
আনারুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক যুবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই ব্রিজ দিয়া তো আমরা যাতায়াত করতে পারতেছি না। মানুষ ব্রিজ পর্যন্ত এসে ঘুরে যায়। পানি পার হয়ে যেতে হয়, ব্রিজ দিয়ে কোন গাড়ি উঠে না। ৪০-৫০ লাখ টাকা খরচ করে ব্রিজ বানিয়ে লাভ কী হলো?’
কৃষক মো. জমশের আলী বলেন, ‘এই ব্রিজ হওয়ার ৯ মাস পার হয়েছে। বর্ষায় ব্রিজের সামনে কাদাপানিতে হাঁটতেও পারি না। বৃষ্টির দিনে এক হাঁটু করে পানি লেগে থাকে। কোনো গাড়ি পার করার সুযোগ নেই। ৬-৭ দিন আগে নতুন করে অল্প কিছু মাটি ফেলছে, আরও বেশি কাদা হয়ে গেছে। এখন হাঁটতে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে।’
এদিকে সেতু নির্মাণের পর এতদিন পার হলেও সংযোগ সড়ক সংস্কার না করায় ব্যবহার করতে পারছেন না এলাকাবাসী। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে দেবীডুবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পরেশ চন্দ্র রায় সরাসরি ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি হননি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প ২০২৪-২০২৫ এর আওতায় ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে দেবীডুবা ইউনিয়নের কামারপাড়ায় এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১ লাখ ১৯ হাজার ৯২০ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ মন্ডলের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তার নম্বর বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা জানতে পেরেছি বর্ষায় রাস্তাটি ভেঙে গিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে একটি প্রকল্প নিয়ে এটি ভরাট করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই এটা ঠিক হয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন