কিশোরগঞ্জ শহরে বিকাশ কর্মী মো. ওমর ফারুক (৩১) নিখোঁজ হয়েছেন চার দিন ধরে। পরিবারের দাবি, জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার পর মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) রাতে মুক্তিপণের দাবিতে পরিবারের কাছে ফোনও আসে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (০৮ অক্টোবর) দুপুরে জেলা শহরে এক মানববন্ধনে ওমর ফারুকের সন্ধান ও অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন।
নিখোঁজ ওমর ফারুক কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের মধুনগর গ্রামের জসীম উদ্দিনের ছেলে। তিনি দুই মেয়ের জনক এবং স্থানীয় এক বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউসে কর্মরত ছিলেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওমর ফারুক কর্মস্থলে যান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অফিস থেকে বের হন। বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে তিনি বাসায় যান। এরপর বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে পুনরায় অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিকাশ অফিস থেকে ফোন আসে— ওমর ফারুক এখনো অফিসে পৌঁছেননি। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ মেলেনি।
নিখোঁজের দুই দিন পর মঙ্গলবার রাতে ওমর ফারুকের বাবা জসীম উদ্দিনের মোবাইলে অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন আসে। কলদাতা দাবি করে, তার ছেলেকে ফেরত পেতে হলে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে।
পরিবার, সহকর্মী ও স্থানীয়রা বলছেন, চার দিনেও ওমর ফারুকের কোনো সন্ধান না মেলায় তারা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।
ওমর ফারুকের বাবা জসীম উদ্দিন বলেন, আমার কাছে ফোনে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। আমি দিতে পারিনি। আমি শুধু আমার সন্তানকে জীবিত ফেরত চাই।
নিখোঁজের ভাই মোশাররফ হোসেন রনি বলেন, আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম ভাই হারিয়ে গেছে। কিন্তু মুক্তিপণের ফোন আসার পর নিশ্চিত হয়েছি, ওকে অপহরণ করা হয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণেই এমনটা হতে পারে। পুলিশকে বারবার বলার পরও কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা দ্রুত ভাইয়ের সন্ধান চাই।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ওমর ফারুকের ছোট মেয়ে ফারজানা আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলে, বাবা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বলেছিলাম, মজা এনো। আমার বাবাকে ফিরিয়ে এনে দিন।
স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার বলেন, আমার দুটি ছোট বাচ্চা আছে। আপনারা আমার স্বামীর খোঁজ দিন। জীবিত অবস্থায় তাকে ফেরত চাই।
বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর এহতেশামুল হুদা মুনাব্বী বলেন, ওমর ফারুক আমাদের কর্মী। অফিস থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা নিয়ে বের হয়েছিলেন। এরপর থেকে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পুলিশ তদন্ত করছে, আমরা সহযোগিতা করছি।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঘটনার পরপরই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তবে এখন পর্যন্ত অপহরণের কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন