বরিশাল নৌ-ফায়ার স্টেশনটি চলছে কিশোরগঞ্জের নিকলী ফায়ার স্টেশন থেকে ধার করা জাহাজ ‘অগ্নিযোদ্ধা’ দিয়ে। দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলার একমাত্র নৌ-ফায়ার স্টেশন এটি। এসব অঞ্চলে নৌপথে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধার অভিযানের দায়িত্ব পড়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অধীনে থাকা এই নৌ-ফায়ার স্টেশনের। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পরও নিজস্ব জাহাজ না থাকায় নানামুখী সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে স্টেশনটি।
আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত বরিশাল নৌ-ফায়ার স্টেশনের একমাত্র ‘অগ্নিঘাতক’ জাহাজটি দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে ধার করা ‘অগ্নিযোদ্ধা’ জাহাজ দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে স্টেশনটি।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বরিশাল নৌ-ফায়ার স্টেশনের আওতায় রয়েছে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ি। এ অঞ্চলের ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার নৌপথের জন্য রয়েছে এই একটি মাত্র স্টেশন। স্টেশনটি কিশোরগঞ্জের নিকলী ফায়ার স্টেশনের জন্য বরাদ্দ জাহাজ ‘অগ্নিযোদ্ধা’ দিয়ে সচল রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় সেটি নিকলীতে ফেরত নেওয়া হলে অচল হয়ে যাবে বরিশাল নৌ-ফায়ার স্টেশন।
অগ্নিযোদ্ধার একমাত্র মাস্টার ড্রাইভার এনামুল হক বলেন, জাহাজটি চালাতে একজন মাস্টার ড্রাইভার ও একজন ইঞ্জিন ড্রাইভার প্রয়োজন। অথচ দীর্ঘ দুই বছর ধরে জাহাজটিতে ইঞ্জিন ড্রাইভার নেই। যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে একার পক্ষে এ জাহাজটি পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অধিকাংশ সময় স্পিডবোটের ড্রাইভার মো. রিপনকে সঙ্গে নিয়ে যাই। রিপনও এ জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে ততটা দক্ষ নয়। তাকে শিখিয়ে দিয়ে কাজ চালাতে হয়, যা অনেকটা কষ্টসাধ্য।
বরিশাল নৌ-ফায়ার স্টেশন সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের নিকলী নৌ-ফায়ার স্টেশনের জন্য ‘অগ্নিযোদ্ধা’ জাহাজটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কিশোরগঞ্জের নিকলী নৌ-ফায়ার স্টেশনটি পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় সেটি পটুয়াখালীতে নিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে জাহাজটি ব্যবহারের জন্য নিয়ে আসা হয় বরিশাল স্টেশনে। তবে নিকলী স্টেশন পুরোপুরি প্রস্তুত হলে ফেরত যাবে ‘অগ্নিযোদ্ধা’। তখন বরিশালে নদীপথে কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে উদ্ধার অভিযানের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। কারণ বরিশালের জন্য বরাদ্দ ‘অগ্নিঘাতক’ জাহাজটি দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তাছাড়া যেসব ছোট ছোট স্পিড বোট আছে তা দিয়ে অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা মোকাবিলা করা অসম্ভব।
স্টেশন সূত্র জানায়, ‘অগ্নিঘাতক’ জাহাজটি ১৯৯৩ সালে তৈরি করা হয়। ফলে বর্তমান প্রযুক্তির তুলনায় অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়া কুয়াশা ভেদ করে চলার জন্য রাডারের ব্যবস্থাও নেই জাহাজটিতে। এর মধ্যে ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠিতে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। বরিশাল নৌ-ফায়ার স্টেশন থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব ছিল মাত্র ১৭ কিলোমিটার। কিন্তু ‘অগ্নিঘাতক’ সেখানে পৌঁছাতেই সময় নেয় ১২ ঘণ্টা। এরপর থেকেই জাহাজটি ফায়ার সার্ভিসের ‘অচল জাহাজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বরিশাল বিভাগীয় সহকারী পরিচালক বেল্লাল উদ্দিন বলেন, বিশাল এই জলসীমার জন্য আরও জলযানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় একাধিকবার মহাপরিচালক ও পরিচালকদের জানানো হয়েছে। অচিরেই এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিঘাতক’ জাহাজটি বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী। সেটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই কার্যক্রম চালিয়ে রাখতে কিশোরগঞ্জের নিকলী নৌ-ফায়ার স্টেশনের জন্য বরাদ্দ ‘অগ্নিযোদ্ধা’ জাহাজটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন