মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলায় দায়ের করা ৩টি হত্যাসহ ১০ মামলার আসামি নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাত হোসেন সাগরকে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মো. আশিকুর রহমান তার আদালতে এ রায় মঞ্জুর করেন।
এরআগে, বুধবার (২২ অক্টোবর) দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে ঢাকা মহানগরের ডেমরা এলাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার ডিবি পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেন।
এদিন গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রলীগ নেতা মো. সাগর মিয়ার (২৯) রিমান্ড শুনানি হয়নি। মামলার নথি আদালতে না পৌঁছায় পরবর্তী দিন ধার্য করে রিমান্ড শুনানি হবে বলে মুন্সীগঞ্জ কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. কামরুল ইসলাম মিয়া জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তার সাজ্জাত হোসেন সাগর নিষিদ্ধ ঘোষিত মুন্সীগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ছিলেন। সাজ্জাত সাগর মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার চর শিলমন্দি গ্রামের আবুল হাসেম গাজীর ছেলে। অপর গ্রেপ্তারকৃত সাগর মিয়াও নিষিদ্ধ ঘোষিত মিরকাদিম পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। সাগর মিয়া রামগোপালপুর চিশতিবাড়ির মোহাম্মদ আসলামের ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে মুন্সীগঞ্জ থানার সামনে সাজ্জাত সাগরের (৩০) ফাঁসির দাবিতে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বিক্ষোভ করেন। দুপুর দেড়টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাত সাগর ও সাগর মিয়াকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ কড়া নিরাপত্তা দিয়ে আদালতে নিয়ে যান। এ সময় আদালত চত্বরে সাজ্জাত সাগরকে লক্ষ্য করে বিক্ষুব্ধ লোকজন ডিম ছুড়ে মারে এবং বিভিন্ন স্লোগান দিলে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, সাজ্জাত হোসেন সাগর গত বছরের ৪ আগস্টে মুন্সীগঞ্জে ৩টি হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন এবং প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেন। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাজ্জাত হোসেন সাগর। দক্ষিণ কোরিয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটকের পর দেশে ফেরত পাঠানো হয়। দেশে ফিরে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন তিনি। পরে ২২ অক্টোবর গভীররাতে মুন্সীগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি পুলিশ) একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বদানকারী পলাতক আসামি মো. সাজ্জাত হোসেন সাগরকে তার সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো. ফিরোজ কবির বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় ৩টি হত্যাসহ ১০টি মামলা রয়েছে সাগরের বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৪ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে মুন্সীগঞ্জ শহরের কৃষি ব্যাংক চত্বর এলাকায় একদফার দাবিতে আন্দোলনে নামেন ছাত্র-জনতা। সেদিন সাজ্জাত হোসেন সাগর প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে তার নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালায়। এ সময় সজল মোল্লা, রিয়াজুল ফরাজী ও ডিপজল নামে তিনজন দিনমজুর গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন আরও দুই শতাধিক ছাত্র-জনতা।
মন্তব্য করুন