

চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মাকসুদ খান জয়ের (২৬) মৃত্যুর ঘটনায় রহস্য উদঘাটনে পুলিশের তিনটি টিম মাঠে নেমেছে। তবে সাত দিনেও মৃত্যুর রহস্য রয়েছে অজানা। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও হচ্ছে আলোচনা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আঘাতের ধরন, ব্ল্যাকমেইলিং, ফোন বাসায় রেখে যাওয়া, সবশেষ ফোনকল ইত্যাদি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে তদন্তে কোনো ক্লু সম্পর্কে জানাতে আগ্রহী নয় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। বারবার তারা আশ্বস্ত করছেন যে, ভালো তথ্যই গণমাধ্যমের কাছে উপস্থাপন করবেন।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম (তদন্ত) কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করতে পুলিশের তিনটি টিম মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও তদন্ত সাপেক্ষে কোনো তথ্য কাউকে জানাচ্ছি না। তবে আমরা তদন্তে অনেক দূর এগিয়েছি।
এ ঘটনায় দুই সোর্সকে পুলিশ খুঁজছে সত্য কি না জানতে চাইলে ওসি (তদন্ত) সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ কথা সত্য নয়। আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের পক্ষ থেকে কাউকে এ ধরনের কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। আমরা আগেও বলেছি এখনো বলছি যে, তদন্ত সাপেক্ষে আমরা কোনো কিছু বলতে পারছি না। তদন্তে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। শিগগিরই আপনাদের কাছে ভালো খবর আমরা উপস্থাপন করব।
গত রোববার সন্ধ্যায় নগরীর বন্দর থানার আনন্দবাজার আউটার রিংরোডসংলগ্ন সাগরতীরে কাশবনের ভেতর থেকে হাত-পায়ের রগ কাটা শামীম মাকসুদ খান জয়ের (২৬) মরদেহ উদ্ধার করে হালিশহর থানা পুলিশ। তিনি ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন এমবিএতে ভর্তি হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন : সুন্দরবন থেকে অস্ত্র গোলাবারুদসহ রাঙ্গা বাহিনীর প্রধান আটক
স্থানীয় এলাকাবাসীর ভাষ্য, নিহত শামীম মাকসুদ খান জয়ের পরিবার এমডিসি টাওয়ারে পরিবারে সঙ্গে বসবাস করতেন। স্থানীয় আকবর আলী কালবেলাকে বলেন, শামীমের বাবা একজন সিএন্ডফ ব্যবসায়ী। তার তিন ছেলে। শামীমের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। এলাকায় কোনো আড্ডাও করত না। নম্র, ভদ্র ছেলেটির এমন মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো নয়। সাত দিন পার হলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে এমন খবর শুনিনি। শামীমের মুত্যুর ঘটনায় আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে টেনশনে আছি।
উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর) আমিরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ব্ল্যাকমেইলসহ অনেক তথ্য পেয়েছি। দেওয়া তথ্যসহ অনেকগুলো বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। উপস্থিত প্রতক্ষ্যদর্শীর ভাষ্যমতে, সুইসাইড, আবার তিনি ফোন বাসায়ও রেখে এসেছেন। বাসায় কেন রেখে আসলেন এটাও গুরুত্বপূর্ণ। আবার আঘাতের ধরন, পরিবারের হত্যা মামলা ইত্যাদি সবকিছু সামনে রেখে আমরা কাজ করছি। যে প্রত্যক্ষদর্শী দেখেছিল তার সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। চুলচেরা তদন্ত চলছে। বিষয়টি তদন্তাধীন হওয়ায় তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারছি না। তবে শিগগিরই আমরা সফলতা পাব বলে আশা করছি।
নিহত শিক্ষার্থীর বাবা শহীদুল ইসলাম খান কালবেলাকে বলেন, পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে। আমাদের ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তারা সংগ্রহ করেছেন। শামীমের মোবাইল ফোনও তারা জব্দ করেছেন। কে বা কারা তাকে ফোন করেছিল সে বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। আমরা এখনো গ্রামের বাড়িতে। তাই কারও সঙ্গে বিস্তারিত কোনো কিছু বলতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। পুলিশ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসুক। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
বন্দর থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, রোববার বিকেল ৩টার দিকে সাগরতীরে কাশবনের ভেতরে হাত-পায়ের রগ কাটা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন শামীম। সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় কয়েকজন দেখতে পেয়ে আউটার রিং রোড টহলরত পুলিশ সদস্যদের খবর দেন। হালিশহর থানা থেকে পুলিশ গিয়ে শামীমকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর তারা রাত ২টার দিকে আমাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। তখন শামীমের পরিবারের সদস্যরাও হাসপাতালে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। কী কারণে কারা খুন করেছে, না কি আত্মহত্যা, তা বলতে পারছে না নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার ও পুলিশ।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) মাহমুদুল হাসান বলেন, ঘটনার দিন দুপুরে তার মোবাইল ফোনে একটি কল এসেছিল। এরপর তিনি চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। তবে মোবাইল ফোন বাসায় রেখে গিয়েছিলেন। নিজেই আত্মহত্যা করেছেন, নাকি কেউ ডেকে নিয়ে খুন করেছেন, নাকি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলেন— এসব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত চলছে।
মন্তব্য করুন