বরিশালের বাকেরগঞ্জে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালককে হত্যা করে মোটরসাইকেল, মোবাইল ও টাকা ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় একজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া এ মামলায় দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) দুপুরের দিকে বরিশালের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারক একেএম রাশেদুজ্জামান রাজা এই দণ্ডাদেশ দেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. কামরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আলোচিত এ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পাওয়ায় অপর একজনকে মামলা থেকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বেল্লাল বয়াতি (৩২) বরগুনা জেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের আব্দুস সালাম হাওলাদারের ছেলে। এ ছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন বরগুনার বুড়িরচর ইউনিয়নের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে শাহীন বয়াতি (৩১) ও একই গ্রামের ইদ্রিস হাওলাদার (৩০)।
রায় ঘোষণার সময় বেল্লাল ও শাহীন আদালতে উপস্থিত থাকলেও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ইদ্রিস হাওলাদার পলাতক ছিলেন। তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাছাড়া অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় সৈয়দ মৃধাকে মামলা থেকে খালা দেওয়া হয়েছে। তিনিও বরগুনার বাসিন্দা।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. কামরুল ইসলাম মামলার নথির বরাত দিয়ে জানান, ‘অভিযুক্তরা সবাই টিউবওয়েল শ্রমিক। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ঘটনার সময় তারা বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুরিয়া ইউনিয়নের বালিগ্রামে শহিদুল ইসলামের বাড়িতে টিউবওয়েল স্থাপন কাজ করছিলেন।’
‘ওই সময় ৫ মার্চ গভীর রাতে স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে প্রিন্স হাওলাদার ওরফে তোতাকে বাড়ি ফেরার পথে পিটিয়ে ও গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে তার মোটরসাইকেল, মোবাইল এবং টাকা ছিনতাই করে আসামিরা। তার মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে লাশ ঘটনাস্থলের পাশে স্থানীয় ইউসুফ হাওলাদারের চায়ের দোকানের পেছনে ফেলে চলে যায়।’
‘ওই রাতেই শহিদুল ইসলামের বাড়ির উঠানে ছিনতাইয়ের মালামাল ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মারামারিতে জড়ায় অভিযুক্ত টিউবওয়েল শ্রমিকরা। এ সময় শহিদুল ইসলাম তাদের ধরে ফেলে এবং একপর্যায় সবার সামনে প্রিন্সকে হত্যার কথা স্বীকার করে তারা। এরপর তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’
এ ঘটনায় পর দিন ২০১৯ সালের ৬ মার্চ প্রিন্সের লাশ উদ্ধার করে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ। একইদিন নিহতের বাবা বালিগ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে আটক চারজনসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বাকেরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাকেরগঞ্জ থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক নকিব আকরাম হোসেন ২০২০ সালের ৩১ জুলাই চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালত ১৩ জন সাক্ষীর স্বাক্ষগ্রহণ শেষে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় একজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড, দুজনকে যাবজ্জীবন এবং একজনকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
আদালতের সরকার পক্ষের আইনজীবি (পিপি) সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ সাজু বলেন, ‘আদালতের এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ রায়ে বাদীর পরিবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।’
মন্তব্য করুন