প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি সুন্দরবন। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা ও পটুয়াখালী মোট ৫টি জেলার সীমান্ত ঘেষে অবস্থিত এটি। সুন্দরবনকে ঘিরে বাকি চার জেলায় কমবেশি পর্যটনশিল্প গড়ে উঠলেও খুলনায় বিগত দিনে খুব একটা চোখে পড়ত না। সম্প্রতি বন বিভাগের পক্ষ থেকে কালাবগী ও শেখের টেকে ২টি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া কয়রার ৪ নম্বর কয়রা লঞ্চঘাট সংলগ্ন সুন্দরবন এলাকায় একটি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
৪ নম্বর কয়রা বনজীবী সমিতির সমিতির সভাপতি খলিল ঢালী বলেন, এখানে স্বল্প খরচে ইঞ্জিনচালিত বোটযোগে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা যাবে। রয়েছে বিশাল এলাকাজুড়ে মনজুড়ানো গোলপাতা ট্রি প্লান্ট প্রজেক্ট। দলবেঁধে পিকনিক করারও সু-ব্যবস্থা রয়েছে নদীর পাড়ে। বর্তমানে বসার স্থান ও রেস্টুরেন্ট, কফি হাউস গড়ে তোলা হয়েছে এই এলাকায়। এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্য্যময় জীবনাচার দেখা যাবে।
কয়রা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এইচ.এম শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অসংখ্য পর্যটন স্পটের মতো আমরাও যুক্ত হতে চাই অর্থনৈতিক গুরুত্বে। এলাকাবাসী বিশেষ করে তরুণ সমাজকে এই পর্যটন আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে তাদের সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করে সমাজে ইতিবাচক ভূমিকায় উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব। মাদক ও অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপের কবল থেকে তারণ্যকে মুক্ত রাখার জন্য এই প্রয়াসের গুরুত্ব অপরিসীম। শীত মৌসুম ও দুই ঈদের ছুটিতে ৪ নম্বর কয়রা এলাকায় লোক সমাগম হয় খুব। তা ছাড়া প্রতিদিন শতশত ভ্রমণ পিপাসু মানুষের আনাগনা দেখা যায়। বন বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুনজর পড়লে এই স্থানটি হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। সরকার রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি এই অঞ্চলের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে আরও যত্নশীল হবে বলে আশাবাদী। প্রকৃতি সুন্দরবন দেখার জন্য এই এলাকাটি রয়েছে অপার সম্ভাবনা।
কয়রা সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান সরদার লুৎফর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে এই এলাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকসমাগম ঘটছে। সুন্দরবন উপভোগ করার জন্য এত সৌন্দর্যপ্রিয় এলাকা খুবই কম। তাই এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার অপার সম্ভবনা রয়েছে। ৪ নম্বর কয়রা লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকায় বন বিভাগের কাশিয়াবাদ স্টেশনের মাধ্যমে একটি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে ব্যাপক লোকজনের সমাগম হবে এই এলাকায়। ৪ নম্বর কয়রা এলাকায় ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র স্থাপনের একটি প্রস্তাবনা রয়েছে।
এলাকাবাসির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে কয়রা সদর থেকে ৪ কিমি পূর্বে ৪ নম্বর কয়রা লঞ্চঘাট সংলগ্ন স্থানটি পর্যটনের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছে সাধারণ মানুষ। খুলনা থেকে ৯৯ কিমি দক্ষিণের এই স্থানটি আসার জন্য খুলনার সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি বাসযোগে (বাসভাড়া ১৮০ টাকা জনপ্রতি, সময় লাগবে ৩ ঘণ্টা) কয়রা সদরে পৌঁছে মদিনাবাদ মডেল সরকারি হাইস্কুল মোড় থেকে ইজিবাইক/মোটরসাইকেলযোগে (ইজিবাই ২০ টাকা, মোটরসাইকেল ৫০ টাকা জনপ্রতি) মাত্র ১০ মিনিট লাগবে ৪ নম্বর কয়রা লঞ্চঘাট পর্যটন কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে। অন্যদিকে খুলনা নতুন বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টায় ছেড়ে আসা লঞ্চযোগে (সময় লাগবে ৭ ঘণ্টা) পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছানো সম্ভব। নামতে হবে ৪ নম্বর কয়রা লঞ্চঘাটে। লঞ্চঘাটের পাশেই এই কেন্দ্র। কয়রা সদরে স্বল্প খরচে থাকার জন্য রয়েছে কয়েকটি আবাসিক হোটেল।
মন্তব্য করুন