সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মা-মেঘনা নদীতে চলছে অবাধে মা ইলিশ নিধন। ভেদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অস্থায়ী ৫০টি ভাসমান আড়ত বসিয়ে চলছে মা ইলিশ কেনা-বেচা।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) ট্রলারযোগে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচিকাটা, দুলারচর, এলাকায় পৌঁছতেই দেখা যায় অসংখ্য নৌকা বহর। সবাই মাঝ মেঘনা নদীর পথে।
স্থানীয় কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধি ওই সব জেলেকে (দাদন দিয়ে) টাকার বিনিময়ে মাছ শিকারে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় পাড়া-মহল্লায় এসব ইলিশ অবাধে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি ছোট আকারের ইলিশ ২০০ থেকে ৩০০ আর বড় সাইজের মা ইলিশ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রশাসনের তৎপরতা নিয়ে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মা ইলিশ কেনা-বেচার অসাধু কিছু কর্মকর্তা জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জেলেরা জানায়, পেটের তাগিদে প্রশাসনের জেলা ও অর্থ জরিমানা উপেক্ষা করে মাছ ধরতে আসেন তারা।
আলমগীর, সিরাজ, রাব্বিসহ কয়েকজন জেলে জানায়, প্রশাসনের লোকজন কখন নদীতে আসছেন, তারা ফোনের মাধমে আগেই জেনে যান।
কীভাবে এসব খবর আসে এমন প্রশ্নে তারা জানায়, ছদ্মবেশে তাদের সহযোগীরা দিনরাত উপজেলা মৎস্য অফিসের গেট ও থানার গেটে বসে থাকেন। কেউই রওনা হওয়া মাত্র নদীর ঘাটে থাকা তাদের আরেক সদস্যকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এর পরই আমাদের পুরো নেটওয়ার্কে খবর ছড়িয়ে যায়।
এদিকে সন্ধ্যায় মেঘনা নদীর দেওয়ান বাজার এলাকা ইলিশ ধরার ছোট ছোট নৌকা দেখা যায়।
ইউপি সদস্য সুমন প্রধানীয়া বলেন, এখন পর্যন্ত আমার পাঁচটি ট্রলার নিয়ে গেছে। ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা দাদন দিয়েছি। জেলেদের সেই টাকা এবার ওঠাতে পারব না। এইবার নদীতে তেমন মাছ নেই। তাছাড়া প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলতে হয় আমাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোলারচর ভাংগা স্কুল মানিক দেওয়ান, শফি দেওয়ান, সিরাজ মন্দি, হাবিব হাওলাদারের নেতৃত্বে ১০টি আড়ত, উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের মোল্লা বাজার এলাকায় ইউপি সদস্য সুমন ও মকবুল মেম্বারের নেতৃত্বে ১৫টি আড়ত, উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের বেপারি বাজার এলাকায় মোশাররফ সরদার, লালমিয়া বেপারি, হাসান হাওলাদারের নেতৃত্বে ৫টি আড়ত, দেওয়ান বাজার এলাকায় মানিক দেওয়ান, আক্তার হোসেন, লাল মিয়া বেপারি, হাসান হাওলাদার, মোশাররফ সরকার নেতৃত্বে ৬টি আড়ত, মনাই হাওলাদার বাজার এলাকায় চারভাগা ইউনিয়ন ৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হাবিব হাওলাদারের নেতৃত্বে ১০টি আড়ত, গৌরাঙ্গ বাজার এলাকায় ফরিদ ও উজ্জ্বল বকাউলের নেতৃত্বে ৩টি আড়ত, কুবুদ্ধির ঘাট এলাকায় ইউপি সদস্য বাবুল এর নেতৃত্বে ৫টি আড়ত, বুন্দুকছি বাজার এলাকায় বাচ্চু মাঝির নেতৃত্বে ৪টি আড়ত, দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়নের বাসগাড়ি বাজার এলাকায় কাশেমের নেতৃত্বে ৫টি আড়ত, নূরউদ্দিন বাজার এলাকায় কবির ঢালী, ইকবাল পাটোয়ারীর নেতৃত্বে ৫ আড়ত, সিডুর টেক এলাকায় ইকবাল খানের নেতৃত্বে ১০ আড়তসহ উপজেলা বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে ভাসমান আড়ত তৈরি করে মা ইলিশ কেনা-বেচা করা হয়।
মাছ কিনতে আসা আলি বেপারি নামে এক পাইকার জানান, এ সময়ে অল্প দামে ইলিশ পাওয়া যায়। আমরা এইসব আড়ত থেকে সারা দিন মাছ কিনে ভোরে মোটরসাইকেল, সিএনজিযোগে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করি। তবে গতবারের তুলনায় এবার মাছ কম তাই কেনা-বেচা তেমন ভালো না। তাছাড়া সবাইকে ম্যানেজ করে আমাদের কাজ করতে হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, আমরা নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। আমরা প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ার আগ থেকেই জেলেদের সরকারি নিয়ম মানতে উদ্বুদ্ধ করেছি। আমরা যখনই সংবাদ পাচ্ছি, তখনই অভিযান চালানো হই। ভাসমান আড়তের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর থেকে নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন