দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারের সময় শেষ হয়েছে। এখন শুধু ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার সমর্থকেরা। উদ্দেশ্য একটাই ভোটারের সংখ্যা বাড়ানো। তাই কেউ কেউ টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছেন। টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগে জনতার হাতে ধরা খেয়েছিলেন সাঈদ হাসান তরফদার শাকিল (৩৫) নামের এক চেয়ারম্যান। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে নির্বাচনী এলাকা মহাদেবপুরে। শাকিল নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিমের ভাগ্নে এবং সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি সদর থানা এলাকার এরশাদ আলীর ছেলে।
ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণ করা হচ্ছে এমন আশঙ্কায় শুক্রবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভাগনে সাঈদ হাসান তরফদার শাকিলকে জনতা আটক করে রাখে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ। এরপর ওই দিন রাতেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাঈদ হাসানকে ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মোবাইল কোর্টের বিচারক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত আরা জাতীয় সংসদের নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা-২০০৮ এর ধারা অনুযায়ী তাকে এ অর্থদণ্ড করেন। এ সময় থানার অফিসার ইনচার্জ রুহুল আমিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে চেয়ারম্যান শাকিলকে আটকের পর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সচেতন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে রাতের বেলা লোকজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে এই যে, শাকিল চেয়ারম্যান ভোট কিনতে এসেছিল টাকা দিয়ে। এ ছাড়া নিচে পড়ে থাকা টাকা লাইট মেরে দেখাচ্ছিল একে অপরকে এবং বলছিল ট্রাক মার্কার টাকা। এ সময় একাধিক জনগণের কথা শোনা যায় ভিডিওতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা ও স্থানীয়রা জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি ছলিম তরফদারের ট্রাক প্রতীক জেতানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে চলেছেন। অভিযোগ আছে ভোটারদের কাছে টাকা বিতরণ করছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে টাকা দিয়ে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনে জেতার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের খোলাশপুকুর এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা এবং একই সময় কিছুদুরে অলংকারপুরে ভাগনে শাকিল চেয়ারম্যানসহ আরও কয়েকজনকে স্থানীয় জনতা আটক করে রাখে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কালবেলাকে বলেন, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাঈদ হাসান তরফদার (শাকিল) টাকা বণ্টন করছেন স্থানীয়দের মাঝে। এমন আশঙ্কায় স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে রাখে। আমরা খবর পেয়ে সেখানে যাই। সেখানে এমন কাউকে পাইনি যাকে সে টাকা দিয়েছে বা তার কাছেও কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। তবে খড়ের উপর ছয় হাজার টাকা পড়ে ছিল। যেটা দিয়ে প্রমাণ করা যায় না। তাই যেহেতু একটি নির্দিষ্ট সময় পর নির্বাচনী প্রচার করা যাবে না, সেই কারণে আচরণবিধি লঙ্ঘন করার জন্য তাকে ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন