একটি কৃষি প্রকল্পের মাধ্যমে পলিথিনের ছাউনি বা আচ্ছাদনের মাধ্যমে পলিনেট চাষাবাদ পদ্ধতি শুরু হয়। বছরজুড়ে সবজিজাত ফসল উৎপাদনে এ পদ্ধতি কুমিল্লার কৃষকদের মনে আজ নতুন উৎসাহ জোগান দিয়েছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি কিংবা প্রখর তাপপ্রবাহ থেকে ফসল রক্ষা করে উৎপাদন বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক এই পলিনেট পদ্ধতি।
কুমিল্লার সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এই পদ্ধতিতে বীজ থেকে চারা উৎপাদন এবং চারা থেকে ফসল উৎপাদন, আবার কীটপতঙ্গ থেকে বীজতলা ও ফসল রক্ষা করতে বেশ কার্যকর। বারোমাসি সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনেও এ পদ্ধতির ব্যবহার অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। পলিনেট পদ্ধতি ব্যবহার করে উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে চাষিরা বেশ সফলতা পাচ্ছেন।
কুমিল্লা কৃষি দপ্তরের উদ্যেগে দাউদকান্দিসহ দু-একটি উপজেলায় এ পলিনেট পদ্ধতিটির প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এটি পরে দেবিদ্বার ও বুড়িচং উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে দেখা গেছে, পলিনেটে সাধারণত উচ্চমূল্যের ফসল ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, পুদিনা, রক মেলন ও লেটুস উৎপাদন হলেও বর্তমানে সাধারণ সবজি চাষেও এই পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে। ওই দুই উপজেলার পাশাপাশি চান্দিনা, বরুড়া, লালমাই এবং লাকসাম উপজেলাতেও এ পদ্ধতির প্রসার ঘটেছে।সম্প্রতি দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ, ভিংলাবাড়ী, আলমপুর ও দামঘর, বুড়িচং উপজেলার পিহর ও নিমসার এবং চান্দিনার চিলরা ও এতবারপুর এলাকা ঘুরে চাষিদের জমিতে বেশ কয়েকটি পলিনেট পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের পরিবেশ দেখা গেছে।
ওইসব উপজেলার চাষি ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পলিনেট পদ্ধতিতে সারা বছর সবজি চাষ সম্ভব। ফলে গ্রীষ্মকালেও শীতকালীন সবজি মুলা, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, গাজর ইত্যাদি ফসল যেমন উৎপাদন করা যাবে তেমনি শীতকালেও গ্রীষ্মের ফসল উৎপাদন করা যাবে।
কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইউব মাহমুদ কালবেলাকে জানান, প্রথম দিকে এটি শুরু হয় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে। ২০১৮ এর গোড়ার দিকে প্রকল্পটি আমরা হাতে নিই। এটি আসলে পলিনেট পদ্ধতিতে বারোমাসি সবজি উৎপাদনে এটি দেশে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে এক নতুন লাভজনক আধুনিক চাষ পদ্ধতি। চাষাবাদ শুরুর দিকে খরচ কিছুটা বেশি লাগলেও শেষের দিকে ফলনের লাভ বুঝতে পারে কৃষক। আর তখনই পদ্ধতিটির ফসলের উৎপাদন খরচের হিসেব মিলাতে গেলে কৃষক উৎসাহ বোধ করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে পলিনেট পদ্ধতিতে বীজ বা ফসল উন্নতমানের পলিথিনের আচ্ছাদন দিয়ে মোড়ানো থাকায় সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি ভেতরে প্রবেশ করে ফসলের ক্ষতি করতে পারে না। এ জন্য অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে। আর এই পদ্ধতিতে চাষি সারা বছর সবজি চাষ করতে পারবেন। শুরুতে খরচ একটু বেশি পড়লেও পরে খরচ কমে সহনীয় পর্যায়ে দাঁড়ায়।
জানা যায়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিশেষ করে পেঁপেসহ সব ধরনের ফলের বীজতলা তৈরিতে এ পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহী চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। পলিনেট পদ্ধতিতে বীজতলাসহ সবজি চাষে কুমিল্লার কৃষকরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে এবং প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরা বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে এ পদ্ধতিতে রবিশস্য চাষে আরো আগ্রহী হয়ে চাষাবাদে মনোনিবেশ করবেন বলে কৃষি বিষেশজ্ঞরা মনে করছেন।
মন্তব্য করুন