মাত্র কয়েক মাস আগে ১০ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলেন বিজিবি সদস্য রইশুদ্দিন কিন্তু এবার বাড়ি আসছেন চিরদিনের ছুটিতে। বুধবার (২৪ জানুয়ারি ) বিকেলে যশোর থেকে বিজিবি সদস্যের মরদেহ চাঁপাইনবাবগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। পরে শ্যামপুরের ভবানীপুর কবরস্থানে জানাজা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাকে দাফন করা হয়।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) ভোরে যশোরের ধ্যানখোলা বিওপির সীমান্তরক্ষায় দায়িত্বরত অবস্থায় মারা যান তিনি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ৪৯ ব্যাটালিয়নের নিহত সদস্য রইশুদ্দিন জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়ার শ্যামপুর গ্রামেরি বাসিন্দা। তিনি দুই সন্তানের জনক।
এর আগে বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় যশোরের শার্শার শিকারপুর সীমান্তে বিজিবির কাছে রইশুদ্দিনের লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ। ৪৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল জামিল ও বিজিবির সহকারী পরিচালক মাসুদ রানা আনুষ্ঠানিকভাবে রইশুউদ্দিনের মরদেহ গ্রহণ করেন।
নিহতের প্রথম জানাজা যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নে অনুষ্ঠিত হয়। পরে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে লাশ তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। শিবগঞ্জ স্টেডিয়ামে হেলিকপ্টার অবতরণ করে। এ সময় ৫৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ হোসেনসহ মরদেহ সঙ্গে নিয়ে আসা ৪৯ ব্যাটালিয়নের বিজিবি কর্মকর্তা ও সদস্যরা একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে লাশ তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। এ সময় হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নিহত রইশুদ্দিনের মুখ শেষবারের মতো দেখার জন্য ভিড় করে শত শত নারী-পুরুষ। কান্নায় ভেঙে পড়ে স্বজনরা, এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।
নিহত বিজিবি সদস্য রইশুদ্দিনের স্ত্রী নাসরিন খাতুন বলেন, ‘রোববার (২১ জানুয়ারি) রাতে স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা হয়। সোমবার সারাদিন আর ফোন ধরেনি। ব্যাটালিয়ন থেকেও কেউ কোনো খবর জানায়নি। পরদিন মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্বামী বেঁচে নেই। ছোট্ট দুই শিশুকে আমি কীভাবে মানুষ করব। আমার তো আর কেউ নেই। কোনো সম্পদ নেই, আমার স্বামীই আমার সম্পদ। মাথা গোঁজার মতো বাড়িঘর নেই, ছোট দুটো শিশুকে নিয়ে কেমন করে চলব। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
রইশুদ্দিন এর মা রুমালি বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের মুখ শেষবারের মতো দেখার অপেক্ষায় আছি।’
মনাকষা ইউনিয়নের সদস্য শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘রইশুদ্দিনের ভাঙা একটা ঘর, স্ত্রী-সন্তান থাকার মতো কিছু ছিল না। তাই তার স্ত্রী নাসরিন ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে তার মা-বাবার বাড়িতেই থাকত। স্বামী ছুটিতে আসলে স্ত্রী বাড়ি আসত। তাদের স্বপ্ন ছিল একটি বাড়ি বানানোর। স্বামীর মৃত্যুতে নাসিমার স্বপ্ন অনিশ্চিত হয়ে গেল। সন্তানদেরকে নিয়ে কোথায় থাকবে? কীভাবে চলবে তার সংসার। রইশুদ্দিনের পরিবারের দায়িত্ব নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।‘
মন্তব্য করুন