ফসলি জমির ওপরের অংশের মাটি তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত ইটভাটায় বিক্রি করা হয়। এতে ওই জমিতে দেড় থেকে দুই বছর তেমন ফসল হয় না।
সরকারি আইন লঙ্ঘন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় কৃষিজমির মাটি ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ওপরের অংশের মাটি কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। জমির মালিকেরা টাকার আশায় না বুঝে এসব মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে মাটি খনন করায় উৎপাদন কমার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে বিক্রি করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের তিতাস নদীর ব্রিজসংলগ্ন ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে মাটি ব্যবসায়ীদের লুট থেকে বাদ যাচ্ছে না কৃষিজমিসহ খাল ও নদ-নদীর তীর। এসব মাটির শেষ ঠিকানা হচ্ছে ইটভাটা। গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ায় এরই মধ্যে বহু কৃষিজমি জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। জমিগুলোয় বোরো, আমন ধান আর শর্ষে চাষ করা হতো। গভীর গর্ত করে মাটি কাটায় ওই জমিগুলোতে দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন। পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
ধরখার এলাকার একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই এলাকায় কয়েক বিঘা জমির ওপর ধান চাষ ও বিভিন্ন সবজি লাগিয়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। দিনে রাতে মজিবুর রহমান ও শেখ জুনায়েদ হোসেনসহ কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী কৃষি জমি থেকে এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে পাশের কৃষিজমির মাটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মাটি কাটা বন্ধ না করলে এক সময় ওই এলাকা থেকে কৃষিজমি হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা।
কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়টি শিকার করে মজিবুর রহমান বলেন, আমার নিজের জমি থেকে মাটি কেটে আশপাশের ইটভাটা মালিকদের কাছে বিক্রি করছি। এই জমি অকৃষি জমি। জমির পাশাপাশি নদীর তীর কেটে মাটি বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নদীর তীর কাটছি না। নদী খনন করা মাটি ক্রয় করে নদীর তীরে রেখেছিলাম সেই মাটি কাটছি। জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহীর কাছে আবেদন করেছি তবে এখনো অনুমোদন পাইনি।
শেখ জুনায়েদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি মাটি কিছু কেটেছিলাম এখন বন্ধ আছে। উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। অনুমোদন পাওয়ার পর কাটব।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম বলেন, উর্বর মাটি তৈরি হতে অনেক বছর সময় লাগে। একটি উদ্ভিদের ১৬ প্রকার খাদ্যের মধ্যে মাটিতে ১৩ প্রকার খাদ্য উপাদান রয়েছে। ফসলি জমির উপরিভাগের ৪-৬ ইঞ্চি মাটি বেশি উর্বর। কিন্তু এভাবে উর্বর মাটি ভাটায় চলে গেলে ভবিষ্যতে ফসল উৎপাদন কমে যাবে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-তে মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণ বিষয়ে বলা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা হতে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না।
কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া আক্তার বলেন, কৃষকদের জমির মাটি কেটে নিয়ে যারা বিক্রি করছেন, খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদনের বিষয়ে তিনি জানান এমন কোনো আবেদন আমাদের কাছে আসেনি।
মন্তব্য করুন