বজরা শাহী মসজিদ নোয়াখালীর উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। ১৮শ শতাব্দীতে নির্মিত এই মসজিদটি সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নের ঢাকা-নোয়াখালী প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত।
মোগল বাদশাহ মোহাম্মদ শাহের রাজত্বকালে বজরার জায়গীরদার পারস্য দেশীয় পীর মিয়া আম্বর শাহের নির্দেশে আমানুল্লাহ ও ছানাউল্যা ৩০ একর জমিতে একটি দীঘি খনন করেন। দীঘি খননকালে সেখানে একটি গম্বুজ পাওয়া যায়। এতে করে এই স্থানে এর আগেও মসজিদ ছিল বলে ধারণা করা হয়। দিঘির পশ্চিম পাড়ে দিল্লির শাহী জামে মসজিদের অনুকরণে ১৭৪১ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে ২৬ বছর। বর্তমানে এই মসজিদটি বজরা শাহী মসজিদ নামে পরিচিত।
চারপাশ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা মসজিদটির প্রবেশ করার পথটি পূর্ব দিকে। আয়তাকার মসজিদটি উত্তর দক্ষিণে লম্বা। মসজিদের পূর্বে ৩টি, উত্তরে ও দক্ষিণে ১টি করে মোট ৫টি দরজা রয়েছে। মসজিদের পূর্বদিকের মধ্যের দরজায় একটি ফারসি ফলকে এর নির্মাণকাল ও নির্মাতার নাম লেখা রয়েছে। মসজিদের ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মেহরাব অত্যন্ত কারুকার্যময়। মসজিদের চার কোণে ৪টি সুন্দর মিনার রয়েছে যা এর সৌন্দর্যকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। বজরা শাহী মসজিদ নির্মাণে মোগল স্থাপত্য রীতি অনুসরণ করা হয়। মসজিদের পূর্বদিকে আছে বিরাট তোরণ। তোরণের দোতলার ওপরে রয়েছে মনোরম উঁচু মিনার। এর সৌন্দর্য ও অলংকরণের জন্য চীন দেশীয় গ্লাস কেটে মসজিদের গায়ে লাগানো হয়।
১৯১১ থেকে ১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে (কারো কারো মতে ১৯০৯ সালে) আমানউল্যার বংশধর বলে কথিত বজরার জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ ও খান বাহাদুর মুজির উদ্দিন আহমদ মসজিদটি ব্যাপকভাবে মেরামত করেছিলেন, এবং সিরামিকের মোজাইক দিয়ে সজ্জিত করেছিলেন। এই মসজিদটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান।
২৯ নভেম্বর ১৯৯৮ থেকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বজরা শাহী মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষা এবং দুর্লভ নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে।
যেভাবে যাবেন: নোয়াখালীর মাইজদী শহর থেকে বজরা মসজিদের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সোনাইমুড়ীগামী লোকাল বাস অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বজরা শাহী মসজিদে যাওয়া যায়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে নোয়াখালী সদরে যাওয়ার পথে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা বাজারে গাড়ি থেকে মূল সড়কে নেমে পায়ে হেঁটে অথবা রিকশায় করে কয়েক মিনিটে চলে যেতে পারবেন এই ইতিহাসিক স্থাপনাটিতে।
মন্তব্য করুন