বরগুনার তালতলীতে তরমুজ ক্ষেতে পানি সেচ দিতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন শতাধিক কৃষক। এতে কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে কয়েক কোটি টাকা। এ বিষয়ে থানা ও ইউএনও অফিসে বারবার অভিযোগ দিলেও তোয়াক্কা করছেন না বিএডিসি ম্যানেজার ফারুক মোল্লা।
জানা যায়, উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের কবিরাজপাড়া এলাকায় গত (২০১৯-২০) অর্থবছরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সমিতির মাধ্যমে সেচ প্রকল্প চালু করা হয়। সেখানে স্থানীয় ফারুক মোল্লাকে ওই সমিতির ম্যানেজার করা হলে সেচ প্রকল্পগুলো নিজের বলে দাবি করেন তিনি । এ সেচ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ২০ হেক্টর জমি রয়েছে। তবে ফারুক মোল্লার সঙ্গে কৃষকের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে কৃষকদের পানি দিচ্ছেন না তিনি। যার ফলে কাঙ্ক্ষিত ফসল ফলতে পাড়ছে না কৃষকরা। এতে প্রতি বছরই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো, আমন ও তরমুজ চাষিরা । এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেও তার কোনো সমাধান পাচ্ছে না স্থানীয় চাষিরা।
পরে স্থানীয় কৃষকরা থানায় অভিযোগ দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। সেখানে পুলিশের সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন তিনি। উপায় না পেয়ে কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসাররের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফারুক মোল্লাকে শুনানির জন্য নোটিশ করেন ইউএনও। গত ৩ মার্চ শুনানির তারিখ থাকলেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে না আসার কথা জানিয়ে দেয় সে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ফারুক মোল্লাকে ইএনও অফিসে ডাকা হয়। গত ৪ মার্চ ইউএনও অফিসে শুনানি হলে সেখানে ফারুক মোল্লা তরমুজ চাষের জন্য কৃষকদের সেচের পানি দিবেন বলে অঙ্গীকার করেন ।
তবে পরের দিনই দেখা গেল তার উল্টো চিত্র। ফারুক মোল্লা কৃষকদের পানি না দিয়ে উল্টো কৃষকদের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় তরমুজ চাষি নজরুল বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে তরমুজ চাষের জন্য সেচের অভাবে কষ্টে আছি। তিনি বলেন, সাবেক ইউএনও কাওসার সাহেব, এস.এম সাদিক তানভীর স্যার বারবার আমাদের পানি দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং প্রতিবছর অস্থায়ীভাবে ব্যাপারটি সমাধান হয়েছে। নতুন ইউএনও আসলেই নতুনভাবে ঝামেলা করেন ফারুক মোল্লা। সাবেক এক সচিব এর প্রভাব দেখিয়ে তিনি আমাদের সেচের পানি দিচ্ছে না।
কালাম নামে আরেক কৃষক জানান, সময় মতো সেচের পানি না পেলে আমরা প্রায় কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হব। বর্তমান ইউএনও স্যারের কাছে আমরা অভিযোগ দিয়েছি। তিনিও বারবার উদ্যোগ নিয়েও তাদের খামখেয়ালির কারণে কিছু করতে পারছে না। উল্টো বর্তমান ইউএনও স্যার ন্যায়ের পক্ষে কথা বলায় তাকে নিয়ে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।
এদিকে ফারুক মোল্লা অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, বিএডিসির পানির সেচ নষ্ট হওয়ার কারণে আমাদের পুকুরে পানি উঠে পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে মাছ মারা যাচ্ছে। এ কারণে পানি সেচ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী মোসাদ্দেক জানান, সেচ প্রকল্প দেওয়া হয়েছে জমিতে পানি সরবারহ করার জন্য। স্থানীয় বিরোধ নিয়ে ওই সেচের ম্যানেজার জমিতে সঠিকভাবে পানি দিচ্ছে না বলে অনেক অভিযোগ আছে আমাদের কাছে। গত ৩/৪ বছর ধরে এমন অভিযোগ আসতেছে বলে জানতে পেরেছি। এগুলো অস্থায়ীভাবে সমাধানও হয়েছে। এ বিষয় অভিযুক্ত ফারুক মোল্লার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি যদি পানি না দেয় তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরামর্শে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, কবিরাজপাড়া এলাকার বিএডিসি সেচের পানি কৃষকদের না দেওয়ার একটি অভিযোগ পাওয়া যায়। এ জন্য শুনানিও করেছি। সেখানে ফারুক মোল্লা কৃষকদের পানি দেবেন মর্মে স্বীকার করেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি কৃষকদের পানি দিচ্ছে না। এ বিষয়ে উপজেলা সেচ কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্য করুন