রমজানে খেজুরের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ইফতারে চাহিদা বেড়েছে কলার। এ সুযোগে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় কলার দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় অপরিপক্ব কলা ওষুধ দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি করছেন।
এ ছাড়া পাহাড়ে উৎপাদন বেশি হওয়ার পরও বিভিন্ন জাতের কলার দাম কমেছে না। ফলে উৎপাদন এলাকাতেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের।
মাটিরাঙ্গায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কলার আবাদ হয়েছে ৫৩০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ২৩ হাজার ৭৮৩ টন। পাহাড়ে উৎপাদিত কলা ফরমালিনমুক্ত হওয়ার কারণে সারা দেশে এর চাহিদা রয়েছে। সেখানকার চিনি চাম্পা কলার তুলানায় দেশি বাংলা কলা অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা অনেক। জানা গেছে, সারা দেশের কলার চাহিদা পূরণ করতে মাটিরাঙ্গাসহ পার্বত্য অঞ্চলের কলার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। পাহাড়ে বসবাসরত সবাই কমবেশি কলা চাষ করে থাকেন। সারা বছর উৎপাদনের পাশাপাশি রমজানের কলার চাহিদা পূরণে তারা রমজান মাসকেই বেশি প্রাধান্য দেয়, যাতে বেশি লাভে কলা বিক্রি করা যায়।
রমজানের কলার এই চাহিদা পূরণে ক্রেতারা বেশ চড়া দামেই কৃষকদের কাছ থেকে কলা কিনে থাকেন। পাহাড়ের উৎসব বৈসাবির কারণেও কলার দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
মাটিরাঙ্গার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাটিরাঙ্গা উপজেলার বড় বাজারে পাবর্ত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে কলা নিয়ে আসছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সারি সারি কলার ছড়া নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা।
বিশেষ করে মাটিরাঙ্গার ১০ নম্বর, বাইল্যাছড়ি, ওয়াছু, বেলছড়ি, গোমতী, বড়নাল, তবলছড়ি ও তাইন্দং এলাকার কলা আসে এ বাজারে। পাশাপাশি অনেকে ওই এলাকার কলার বাগান কিনে কলা সংগ্রহ করে বাজারে নিয়া আসেন। এসব কলা চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্রির জন্য নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা।
প্রতিটি চিনি চাম্পা কলার কাঁদি ৫০০ টাকা। আগে দাম ছিল ২০০ টাকা। প্রতিটি বাংলা কলা কাঁদি এক হাজার ৩০০ টাকা, যা আগে বিক্রি হতো ৬০০ টাকায়। এ ছাড়া ৫০০ টাকার নিচে কোনো কলার কাঁদি পাওয়া যায় না বলে জানান ক্রেতারা। বড় একটি কলার কাঁদি বিক্রি হয় ২-৩ হাজার টাকায়। অন্যদিকে রমজানের আগে পাকা কলার প্রতি পিস ৩-৪ টাকায় বিক্রি করা হতো। রমজানে তা বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকায়।
মাটিরাঙ্গার স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়া কালবেলাকে বলেন, আগের চেয়ে এখন দ্বিগুণ দামে কলা কিনতে হচ্ছে। আমরা বাড়তি দামে বিক্রি করতে না পারলে লাভ করতে পারব না। দাম বাড়লেও কলার চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে। আগে যে পরিমাণে কলা বিক্রি হতো, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে।
আরেক ব্যবসায়ী করিম মিয়া বলেন, বাজারে কলার আমদানি আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে যাতায়াত এবং শ্রমিকের খরচ বেড়ে যাওয়ায় কলার উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। এ কারণে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কলার দামও বাড়তি। এখন এই ব্যবসায় পুঁজি বেশি লাভ কম।
কলা ব্যবসায়ী কাজল মিয়া বলেন, পাঁচ বছর ধরে এখান থেকে কলা কিনি। পাহাড়ের কলার চাহিদা বেশি থাকলেও বাজার দখলে রয়েছে অপরিপক্ব কলার। রমজানে মাসে আমি এক হাজার কলার কাঁদি কিনেছি। তবে শহরে কলার দাম কমতে শুরু করলেও মাটিরাঙ্গায় দাম বেশি।
মাটিরাঙ্গার কলার বাজারের ইজারাদার প্রতিনিধি হজরত আলী বলেন, বানরের আক্রমণ এবং ঝড়ের কারণে কলা গাছের ক্ষতি হয় বেশি। মাটিরাঙ্গা থেকে প্রতি কলার ছড়া চার টাকা করে টোল নেওয়া হয়। সপ্তাহে সাতটি গাড়ি লোড হয়। প্রতি গাড়িতে গড়ে ৬০০/৭০০টি কলার কাঁদি থাকে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ আলী কালবেলাকে বলেন, সমতল বা স্যাঁতসেঁতে মাটিতে কলার ফলন ভালো হয় না। পাহাড়ের মাটিতে কলা ফলন ভালো হয়। তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। শুধু কলা চারার আশপাশে জঙ্গল পরিষ্কারসহ মরা পাতা ও অতিরিক্ত চারা কেটে ফেলে দিতে হয়।
তিনি বলেন, এটি অনেক লাভজনক ফল। এটি চাষে কৃষকের কোনো লোকসান গুনতে হয় না। তবে অপরিপক্ব কলা সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
মন্তব্য করুন