প্রতি বছর দেশে চা চাষের জমি বৃদ্ধির পাশাপাশি চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। তবে চায়ের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চা শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ও হতাশায় রয়েছেন চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া দেশের বাইরে থেকে চোরাই পথে চা বাজারে ছড়িয়ে পড়া ও নিয়মবিবর্জিত পদ্ধতিতে নিম্নমানের চা উৎপাদনে ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছেন বাগান মালিক।
উৎপাদন বছরের শুরুতে পরিমিত বৃষ্টি ও অনুকূল আবহাওয়া পেয়ে দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল চায়ের আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। চলতি মৌসুমে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে আশাবাদী বাগান মালিক। তবে গেল বছরও চায়ের রেকর্ড পরিমান উৎপাদন হলেও ন্যায্যমূল্য পাননি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিম্নমানের চা উৎপাদন ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে চোরাই পথে চা প্রবেশ করায় চা শিল্প অনেকটাই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বাগান মালিকরা নিলামে চা বিক্রি করতে গিয়েও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। ২০২৩-২৪ সালের হিসাব অনুয়ায়ী দেশে ৫০টি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ দেশে ৪৮টি নিলামে চা বিক্রির হিসেব অনুয়ায়ী প্রতি কেজি চায়ের গড় মূল্য ছিল ১৭২টাকা, যা উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম।
বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশে ১৬৮টি চা বাগানের মধ্যে ৯২টি চা বাগান রয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে । ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় প্রথম চায়ের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। সে হিসাবে প্রায় ১৭০ বছর ধরে দেশে চা উৎপাদন হচ্ছে। ২০২৪ সালে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০৮ মিলিয়ন কেজি। ২০২৩ সালে চায়ের উৎপাদন হয় ১০২ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন কেজি। এর আগের বছর ২০২২ সালে উৎপাদন হয় ৯৩ দশমিক ৩১ মিলিয়ন কেজি চা। চলতি বছর চায়ের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি চায়ের গুণগত মান সঠিক রাখতে নানামুখী উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে। উৎপাদিত চা অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা সম্ভব হবে জানালেন চা বোর্ডের এই কর্মকর্তা।
শ্রীমঙ্গল এম আর খান চা বাগান জেনারেল ম্যানেজার কাজি মাসুদুর রহমান বলছেন, শ্রমিক মজুরি, জ্বালানি তেল, রেশন, বাগানে ব্যবহৃত রোগবালাই দমনের কিটনাষক, সার এবং বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে। সে তুলনায় চায়ের মূল্য কমেছে।
বাংলাদেশ চা সংসদের (বিটিএ) সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান সভাপতি এবং সিনিয়র টি-প্লান্টার জি এম শিবলী বলেন, দেশে চায়ের উৎপাদন খরচও অনেকে বেড়েছে। কিন্তু নিলামে অনেক সময় ভালো দাম পাওয়া যায় না। যারা প্যাকেটজাত করেন তারা বাজারে অনেক দামে চা বিক্রি করেন। কিন্তু বাগান মালিকরা তেমন দাম পান না। এই অবস্থা চলতে থাকলে তারা নিরুৎসাহিত হবেন। তাই চা শিল্প টিকে থাকার স্বার্থে ভালো চা তৈরি এবং নিলামে ভালো দামের দিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরি।
শ্রীমঙ্গলে প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের (পিডিইউ) পরিচালক ড. রফিকুল হক জানান, চা শিল্প রক্ষায় চায়ের কেজিপ্রতি চায়ের নিম্নতম মূল্য ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা। ভালো মানের চা নিলামে ন্যায্য মূল্য পাওয়া। চোরাই পথে চা আসা বন্ধ করা, পঞ্চগড় এলাকায় চা উৎপাদনের মান এবং বিধিসম্মতভাবে চা বাজারজাত করার ব্যবস্থাসহ বেশকিছু উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণের দাবি জানান চা সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন