নজরুল ইসলাম, মেলান্দহ (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

তাপপ্রবাহ আর লোডশেডিংয়ে জামালপুরে বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা

সেচ সংকটে ধানে চিটা দেখা দিয়েছে। ছবি : কালবেলা
সেচ সংকটে ধানে চিটা দেখা দিয়েছে। ছবি : কালবেলা

চৈত্র শেষে বৈশাখ। দেশে পক্ষকালব্যাপী বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। মিলছে না বৃষ্টির দেখা। তীব্র তাপ আর ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। সেই সঙ্গে পুড়ছে কৃষকের কপাল। চারদিকে সবুজ বোরো ধানের সবুজ পাতার উছলে পড়া ঢেউ যখন কৃষকের মনে আনে সুখ, ঠিক তখনই তীব্র তাপে বোরোক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। আর প্রকৃতিগত এ সমস্যায় সারাদেশের মতো জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার বোরো চাষিদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ।

মাঠের পর মাঠজুড়ে সেচযন্ত্র থাকলেও বিদ্যুতের দেখা মেলা ভার। লোডশেডিংয়ে নাকাল কৃষককুল। দিনে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ মিললে কষ্ট করে সেচ দেওয়া পানিও জমিতে বেশিক্ষণ থাকছে না। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মতো। এতে করে সেচ পাম্পগুলো ঠিকমতো চালাতে পারছেন না কৃষকরা। বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় মোটর পুড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, পানির অভাবে জমি ফেটে যাচ্ছে। ধানের থোড় বের হওয়ার পর কিছু কিছু জমিন শুকিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ অবস্থার পরিবর্তন না হলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের।

উপজেলার ফুলকোচা গ্রামের কৃষক সুজন মিয়া বলেন, ‘বোরোর আবাদ কইরা আমরা বর্তমানে খুব বিপদের মধ্যে আছি। মাঠে যে থুর ধানগুলা বাইর হইতাছে, ঠিকমতো সেচ দিবার পাইতেছি না। এই ধানগুলা চিটা হইব।’

কমলাবাড়ী গ্রামের কৃষক জাবেদ আলী বলেন ‘কি আর কমু, গলা ঝড়াইয়া আহে, আবাদ তো নষ্ট হইয়া গেল। তাপের চোটে ক্ষেতে পানি থাহে না। মটর দিয়ে পানি দিমু কারেন্টও থাহে না, আহে আর যায়। মটর ইস্টার্ট দেই ক্ষেতে পানি যাওয়ার আগেই কারেন্ট যায় গা। এহন আংগরে মরণ ছারা কোনো উপায় আছে কন। পানি দিবের না পাইলে তো সব শ্যাষ।’

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় এবার উপজেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ২৫০ হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ২০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। হিসাবমতে ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ কম হলেও ফলন দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পুষিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা ছিল বেশি।

তীব্র তাপপ্রবাহ আর লোডশেডিংয়ে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে কালবেলাকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, প্রকৃতিগত সৃষ্ট এ সংকট আর লোডশেডিং সমস্যায় উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, উপজেলার বোরো আবাদের প্রায় ৩০ শতাংশ ধান পেকে যাওয়ার কারণে এই ধানগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না। তবে বাকি যে ধানগুলোর থোড় অর্থাৎ বের হচ্ছে যদি এ রকম তাপপ্রবাহ আরও সপ্তাহ নাগাদ থাকে, তাহলে গাছের গোড়ায় পানি না থাকার কারণে ধানে চিটা হতে পারে। আর এজন্য প্রত্যেকটি এলাকায় গ্রুপভিত্তিক কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকেও আমরা অনুরোধ করেছি সংকট মোকাবিলায় রাত ১২টার পর থেকে নিরবচ্ছিন্ন টানা চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেওয়ার, যেন কৃষক সেচ দিতে পারেন। পানির কারণে ধান গাছের পরাগায়ন যাতে ব্যাহত না হয়। আর ধান ছাড়া অন্যান্য ফসলে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও জানান তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রিকশা চালককে কুকুরের সঙ্গে বেঁধে রাখার ঘটনায় ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

ঘোড়াশাল পৌর বিএনপির সভাপতি সাত্তার, সম্পাদক দেলোয়ার

জনগণ যাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, তার সঙ্গেই আমি কাজ করব : আইনমন্ত্রী

কক্সবাজার এক্সপ্রেসের বগি থেকে ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন

ফের আচরণবিধি লঙ্ঘন, ৭ ডেগ খিচুরি জব্দ

ঘাস কাটতে গিয়ে সাপের কামড়ে যুবকের মৃত্যু

গায়ের কাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেল ৫ কোটি টাকার সোনা!

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

গভীর রাতে মাটি চুরি, ৩ জনের কারাদণ্ড

জাতীয় আলোকচিত্র পুরস্কার পেলেন ১৩ আলোকচিত্রী 

১০

দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা উপকূলে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি

১১

অবৈধভাবে পুকুর খনন, বিপাকে যুবলীগ নেতা

১২

‘সকলের প্রচেষ্টায় আত্মহত্যা নিরসন করা সম্ভব’

১৩

স্বপ্নপূরণে ছেলেকে হেলিকপ্টারে বিয়ে করালেন স্কুলশিক্ষক বাবা

১৪

মালয়েশিয়ায় থানায় হামলা চালিয়ে ২ পুলিশ সদস্যকে হত্যা

১৫

উপজেলা নির্বাচন / যে কোনো অনিয়মকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে : ইসি আহসান হাবিব

১৬

টেনিসে বিরাট সম্ভাবনা আছে : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

১৭

‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোর না হলে দুঃখ অপেক্ষা করছে’

১৮

বাংলাদেশি পর্যটকদের ৩ দিন ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা 

১৯

এক বছরেও আলোর মুখ দেখেনি জাজিরা পৌরসভার আলোকসজ্জা প্রকল্প

২০
X