গত ২৫ বছরের ইতিহাসে খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সোমবার (২৯ এপ্রিল)। এদিন খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গত ২৫ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর আগে ২০২৩ সালের এপ্রিলে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
শুধু খুলনায় নয়, গোটা বিভাগে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। দিন দিন বাড়ছে তাপমাত্রা। দাবদাহে পুড়ছে পুরো বিভাগ। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়। আর যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, গত ২৫ বছরের মধ্যে সোমবার খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, জলাশয় ভরাট করা ও গাছপালা কেটে স্থাপনা গড়ে তোলাই প্রধানত তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এ ছাড়া লবণাক্ততা বৃদ্ধিতে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সোমবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিরাজ করছে, যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আর যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া খুলনায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, মোংলায় ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি এবং কয়রায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে গত ১৩ এপ্রিল থেকে অর্থাৎ ১৬ দিন ধরে দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। তীব্র দাবদাহে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অসহ্য গরমে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম অস্বস্তি। বৃষ্টির দেখা নেই, ফলে বিপাকে পড়েছে মানুষ ও প্রাণীকুল।
তীব্র গরম থেকে রক্ষা পেতে খুলনায় দফায় দফায় বৃষ্টির কামনায় ইসতিসকার নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। নাভিশ্বাস উঠেছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউই বের হচ্ছেন না। গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। এ ছাড়া গরমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে নলকূপ ও পাম্পে ঠিকমতো পানি উঠছে না।
অসহ্য গরমে পানি, শরবত ও ফল নিয়ে পথচারী, যানবাহন চালক ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে খুলনার বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও তরুণ সমাজ।
নগরীর খালিশপুর বঙ্গবাসী এলাকার বাসিন্দা সোহাগ আসিফ বলেন, এমন গরম কখনও পড়েনি। এ বছর গরমের মাত্রা অনেক বেশি। পানি খেয়েও তৃষ্ণা মিটছে না। স্যালাইন ও শরবত পান করছি। বাতাসও যেন উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বাড়িতে চুলার পাশে বসলে যেমন তাপ, ঘরে ও বাইরে তেমন তাপ অনুভূত হচ্ছে।
রিকশাচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, বেশিক্ষণ রোদের তাপ সহ্য করা যাচ্ছে না। ছায়ায় দাঁড়ালেও বাতাসের সঙ্গে মনে হচ্ছে আগুনের তাপ আসছে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। তিনি যেন দ্রুত বৃষ্টি দেন। বৃষ্টি না হলে গরম কমবে না।
এদিকে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে না যেতে খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সতর্ক করে চলছে মাইকিং। এ ছাড়া গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। এখন প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও তিনগুণ রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। ফলে চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এখানকার চিকিৎসক ও নার্সদের।
মন্তব্য করুন