মাদারীপুর সদরে একটি হত্যা মামলা কেন্দ্র করে পুলিশের ভয়ে পুরুষশূন্য পুরো গ্রাম। পুরুষরা না থাকায় জমির পাকা ধান প্রচণ্ড রোদে পুড়ে ঝরে পড়ছে। ফলে কয়েকশ বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে।
এ ছাড়া ধান কাটতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে। এলাকায় পুরুষশূন্য হওয়ায় নারীরা ধান কাটতে গেলে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ মামলার বাদীপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে। এমনকি শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে গেলেও আসছে বাধা।
আসামিপক্ষকে শিক্ষা দিতেই জমিতে ধান কাটতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি বাদীপক্ষের লোকজনের। এতে দিশাহারা কৃষকের পরিবার। চলতি মৌসুমে ধান ঘরে তুলতে না পারলে লাখ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা কৃষকদের। তবে ধান কাটতে সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনাটি মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব কলাগাছিয়া এলাকার। রাধিকা হালাদার হত্যাকাণ্ডের জেরে বাড়ি ছাড়া আসামিরা। ফলে কয়েকশ বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে। প্রচণ্ড রোদে পুড়ে ঝরে পড়ছে ধান।
জানা গেছে, গত ১৪ মার্চ পিকনিকের গাড়িতে সামনে বসা নিয়ে মিল্টন হালদার ও প্রকাশ বৈরাগীর ঝগড়া হয়। পরদিন সকালে হালদার ও বৈরাগী বংশের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ লাগে। এতে কয়েকজন আহত হলে তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাধিকা হালদারকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মিতালী হালদার বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় ৪০ জনের নামে একটি মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। মামলার কারণে পুরুষরা এলাকাছাড়া। এ কারণে মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধান।
কৃষক সুকুমার ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামী বলেন, একটি মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিবার ও বংশের সব পুরুষকে আসামি করা হয়েছে। সবাই পলাতক। চাষ করা জমিতে ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে। আমরা নারীরা জমিতে ধান কাটতে গেলে লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর বাদীপক্ষ হামলা চালায়। এই ধান ঘরে তুলতে না পারলে সারা বছর আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’
দিলীপ বৈরাগীর স্ত্রী চম্পা বৈরাগী বলেন, ‘বছরে একবার জমিতে ধান হয়। এই ফসল ঘরে তুলতে না পারলে ছেলেমেয়ে, পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। এখন বেঁচে থাকার কোনো রাস্তা নেই। ধান কাটতে এলে বাদীপক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা, দেশিয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। আমাদের ধাওয়া দিয়ে জমি থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই।’
নিহত রাধিকা হালদারের ভাতিজা বিল্পব হালদার বলেন, ‘আসামিদের পরিবারের কটূক্তিমূলক কথার কারণেই ধান কাটতে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। জমির ধান জমিতেই থাকবে। অন্য কেউ ধান কাটতে পারবে না।’
নিহত রাধিকা হালদারের পুত্রবধূ লক্ষ্মী রানী হালদার বলেন, ‘আসামিদের পরিবারের নারী সদস্যরা অনেক গালিগালাজ করে। তাই ধান কাটতে দেওয়া হচ্ছে না। মামলার আসামি যারা, তারা সরাসরি ধান কেটে নিয়ে যাক। অন্য কেউ ধান কাটতে এলে এমনই হবে।’
পূর্ব কলাগাছিয়া এলাকার কামাল মাতুব্বর বলেন, ‘পূর্ব কলাগাছিয়া এলাকায় মারামারিতে একজন লোক মারা গেছে। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে, আসামিও আছে। আসামিপক্ষের লোকজন পলাতক। বাড়িতে শুধু নারী সদস্যরা রয়েছে। এই আসামিপক্ষের জমিতে ধান পেকে গেছে, কিন্তু বাদীপক্ষের লোকজন ধান কাটতে দিচ্ছে না। ৩/৪ দিনের মধ্যে সব ধান নষ্ট হয়ে যাবে। এতে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হবে কৃষকদের।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, জমিতে পাকা ধান ঘরে তুলতে বাধা দেওয়া অপরাধ। ধান কেটে নেওয়ার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মারুফুর রশিদ খান কালবেলাকে বলেন, ধান পেকে জমিতে নষ্ট হচ্ছে। সেই ধান কাটতে বাধা বিষয়টি আমি শুনেছি। কৃষকের পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন