রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ভিড়েছে ইম্প্রুভড মিডিয়াম টাইপ (মাঝারি আকারের) ফেরি গৌরি। পারের অপেক্ষায় সিরিয়ালে থাকা অন্য যানবাহনগুলো এ ফেরিতে অনায়াসে পার হতে পারলেও, যেতে পারল না বড় আকারের দুটি কাভার্ডভ্যান। কারণ ফেরির ছাদে আটকে যায় এ কাভার্ডভ্যানের মাথা।
সম্প্রতি দৌলতদিয়ার ফেরিঘাটে দেখা যায় এমন দৃশ্য। ঈদুল ফিতরের আগে গৌরি ও বাইগার নামে নতুন দুটি ফেরি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যুক্ত করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। তবে বড় কাভার্ডভ্যান পারাপারে কোনো উপকারেই আসছে না ফেরি দুটি।
চালকদের অভিযোগ, নৌরুটে নতুন দুই ফেরি যুক্ত হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়েছিলেন তারা। তবে এসব ফেরিই এখন তাদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। বড় কাভার্ডভ্যানের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে মালামালের স্তূপ উঁচু হয়ে গেলে সেগুলোও ওঠানামা করতে পারছে না এগুলো। একই টাইপের আরও চারটি ফেরি এ নৌরুট ছাড়াও আরিচা-কাজীরহাট এবং ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে চলাচল করছে। ছয়টি ফেরিই ঈদুল ফিতরের আগে ৪ থেকে ৭ এপ্রিলের মধ্যে চালু করা হয়। ফেরিগুলোর মধ্যে গৌরি ও বাইগার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচল করছে। ফেরিগুলোতে বড় কাভার্ডভ্যান তুলতে না পেরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চালকদের।
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী চালবাহী কাভার্ডভ্যানের চালক মো. আসিফ বলেন, গৌরি ও বাইগার ফেরির উচ্চতা কম, আর আমাদের গাড়ির উচ্চতা বেশি। যে কারণে ফেরিতে উঠতে গেলে গাড়ির মাথা ফেরির ছাদের নিচে আটকে যায়। তাই ঘাটে এসে সিরিয়ালে আগে থাকার পরও, এই ফেরি ঘাটে ভিড়লে আমরা আর ফেরিতে উঠতে পারি না। অথচ আমাদের পেছনে থাকা গাড়িগুলো আগে পার হয়ে যায়। অন্য ফেরির অপেক্ষায় অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের ঘাটে বসে থাকতে হয়।
যশোর থেকে ঢাকার ধামরাইয়ের বারোবারিয়া গামী কাভার্ডভ্যানের চালক আজিজুল হাকিম বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে নতুন ফেরি কিনেছে। অথচ আমাদের বড় গাড়ির কোনো উপকারেই আসছে না । বরং এসব ফেরির কারণে আমাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। ঘাটে এসে মনে মনে দোয়া করি, এ ফেরিগুলো যেন ঘাটে না ভিড়ে।
বিআইডব্লিউটিসির একটি প্রকল্পের আওতায় এসব ফেরি সংগ্রহ করা হয়। ছয়টি ফেরি কেনার খরচ ১৩৯ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশের মতো টাকা দেওয়া হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানিয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং ২টি নতুন স্লিপওয়ে (ঢালু পথ) নির্মাণ করা হচ্ছে।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সূত্র বলছে, এ ঘাটে থাকা গৌরি ও বাইগার ফেরিতে ১৩ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার কাভার্ডভ্যান উঠানামা করতে পারে। এর চেয়ে বেশি উঁচু হলে সেগুলো ফেরির ছাদের নিচে আটকে যায়।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সংস্থার ৫৯টি ফেরি আছে। এর মধ্যে নতুন ছটি ফেরি ছাড়া অন্যগুলোতে এ সমস্যা নেই। বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ড. এ কে এম মতিউর রহমান বলেন, ফেরি বানানোর জন্য কিছু স্পেসিফিকেশন (সুনির্দিষ্ট চাহিদা) দেওয়া হয়েছিল যে উচ্চতা এত লাগ, তাই করা হয়েছে। যে যানবাহন ওই ফেরিতে ঢুকবে না, সেটাতে তা যাবে না। আরেক ফেরিতে যাবে। এতে অসুবিধার কিছু নেই।
নতুন ছয় ফেরিতে বড় কাভার্ডভ্যান ওঠানামা করতে না পারার বিষয়টি সমাধানের জন্য কাজ করা হচ্ছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিসির কনিষ্ঠ নির্মাণ প্রকৌশলী খন্দকার আবুল আহসান। তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমরা নকশাকারের সঙ্গে কথা বলেছি। এর সমাধান করব।
বিআইডব্লিউটিসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ফেরিগুলোতে যেসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেগুলো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলি শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড ঠিক করে দেবে বিনা পয়সায়। তারা এভাবে আগামী দুবছর সেবা দেবে। উচ্চতার যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাও বিনা পয়সায় ঠিক করা হবে।
বিআইডব্লিউটিসির একটি সূত্র বলছে, নতুন ছয় ফেরির পানির নিচের অংশের গভীরতা (ড্রাফট) বেশি। সে কারণে নদীতে বেশি পানি ছাড়া সেগুলোর চলাচলে সমস্যা হয়।
বিআইডব্লিউটিসির মুখ্য নৌ নির্মাতা মো. জিয়াউল ইসলাম বলেন, নতুন ফেরিগুলো ডাবল বটম (দুটি তলবিশিষ্ট) হওয়ার কারণে ড্রাফট বেশি হয়েছে। কোনো কারণে একটি তল ফেটে পানি ঢুকলে তখন ফেরি যেন না ডোবে, সে জন্য দুটি তল দেওয়া হয়েছে।
জিয়াউল ইসলাম আরও বলেন, বেশি ভার নেওয়া হলে ফেরিগুলোর পানির নিচের অংশ আরও বেড়ে যাবে। তাই তারা ভার ২৫০ টনের মধ্যে রাখতে বলেছেন।
মন্তব্য করুন