দিন দিন বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সীদের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে আত্মহত্যা। সমাজের এ মারাত্মক প্রবণতাকে রুখতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইলের পর মাইল সাইকেল নিয়ে ছুটে চলেছেন কলকাতার বাসিন্দা সঞ্জয় বিশ্বাস।
চার বছর ধরে ‘আত্মহত্যাকে না বলি’ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সাইকেল চালিয়ে ভারতের ২৬টি রাজ্য ভ্রমণ করেন। শুধু ভারতে তার সচেতনতা কার্যক্রম থেমে নেই। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বর্তমানে আত্মহত্যাকে না বলার বার্তা নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে।
রোববার (৯ জুন) বিকেলে বাংলাদেশের ৪৯তম জেলা হিসেবে দিনাজপুরের খানসামায় অবস্থান করেন।
জানা গেছে, সঞ্জয় বিশ্বাসের ‘আত্মহত্যাকে না বলি’ সচেতনতার পেছনে রয়েছে তার এক গল্প। সঞ্জয় নিজেও দুবার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। ব্যর্থও হন তিনি। কিন্তু বুঝতে পারেন নিজের ভুল। তারপর থেকেই মানুষের মনে আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা আনতে দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়ান সঞ্জয়। ‘আত্মহত্যা যন্ত্রণা শেষ করে না, এটি অন্য কাউকে দিয়ে যায়’ এ মন্ত্র বাংলা, হিন্দি, ইংরেজিতে লিখে পোস্টার বানিয়ে সাইকেলে লাগিয়ে ছুটছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গাইঘাটার থানার ঠাকুরনগরের বাসিন্দা সঞ্জয় বিশ্বাস।
ভারতীয় যুবক সঞ্জয় বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, ভারতের মতো জনবহুল দেশে আত্মহত্যা একটি ভয়াবহ সমস্যা। যে কারণে আমি সাইকেলে চালিয়ে আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছি। গ্র্যাজুয়েশন পাস করে কোনো কাজ না পেয়ে ছোট খাবারের দোকান শুরু করি। সেই ব্যবসা অচিরেই বন্ধ হয়ে যায়। তারপর লকডাউনের ঠিক আগে আবার নতুন দোকান শুরু করি। তার দেড় মাসের মধ্যে শুরু হয় লকডাউন। সেই কারণে ফের বন্ধ হয়ে যায় দোকান। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ি। সব পুঁজি প্রায় শেষ।
তিনি বলেন, সব হারিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হই। কিন্তু, তাতে সফল হইনি। তারপরই আত্মহত্যার খারাপ দিক সম্পর্কে জানতে পারি। বাবা মায়ের মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে নিজের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে পথে নামি। করোনা মহামারি শেষ হওয়ার পরই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।
সঞ্জয় বিশ্বাস আরও বলেন, আমার দেশের ইতোমধ্যে ২৪টি রাজ্য ও বাংলাদেশ ঘুরে ফেলেছি। কঠিন পরিস্থিতিতে অনেকেই আমায় বলে রোজ সাইকেল নিয়ে ঘুরতে। সেই থেকেই এ পরিকল্পনা। এ অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বলিউড তারকা সোনু সুদ। মুম্বাইয়ের এ অভিনেতা নিজে দেখা করে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
কীভাবে চলে এ সাইকেল যাত্রার বার্তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পরিচিতি বেড়েছে। উত্তরপ্রদেশ, পণ্ডিচেরির আশ্রম থেকে আমাকে সাহায্য করা হয় এ সাইকেল যাত্রার জন্য। প্রচুর পরিচিত মানুষ জুটেছেন। তারাও সাহায্য করেন।
বাংলাদেশ সফরে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা পাচ্ছেন উল্লেখ করে ভারতীয় এ যুবক বলেন, যেখানেই যাচ্ছি মানুষ আপনজনের মতো কাছে টেনে নিচ্ছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বাইকার ও সাইক্লিং গ্রুপের সদস্যরাও আমাকে সাহায্য করছেন।
মন্তব্য করুন