নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৪, ০১:০২ এএম
আপডেট : ২১ জুন ২০২৪, ০১:০৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

নারী নির্যাতন মামলায় চেয়ারম্যান কারাগারে

চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২) আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক উম্মে সরাবন তহুরা এ আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ পুলিশের পরিদর্শক আব্দুর রশিদ।

এর আগে উক্ত মামলায় উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন শেষে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মাকসুদ। বৃহস্পতিবার আসামি পক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করেন আদালত।

গত ১৯ জুন আদালতে আত্মসমর্পনের শেষ দিন ছিল। তবে এ দিন একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর মৃত্যুতে নারায়ণগঞ্জ আদালতের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নির্ধারিত তারিখে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি।

জানা যায়, মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে মাকসুদ হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী সুলতানা বেগম ২৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল আদালতে তাকে আসামি করে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে ২৪ এপ্রিল বন্দর থানায় যৌতুকের জন্য মারধরের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন তার স্ত্রী সুলতানা বেগম।

২৫ এপ্রিল বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এবং বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ মাকসুদের আট সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেন।

মামলার আবেদনে সুলতানা বেগম উল্লেখ করেন, প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে ১৯৯৮ সালের ০৭ জুলাই সুলতানা বেগমকে বিয়ে করেন মাকসুদ। বিয়ের সময় সুলতানার পরিবার মাকসুদের হাতে নগদ ৭ ভরি স্বর্ণালংকার তুলে দেয়। বিয়ের পরে সুলতানাকে নিয়ে একটি ভাড়া করা বাসায় উঠেন মাকসুদ। এর দুই বছরের মাথায় তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। যার নাম ইসরাত জাহান শ্রাবন্তী। এক পর্যায়ে সুলতানা টের পান, মাকসুদ একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়াতে লিপ্ত। এসব নিয়ে মাকসুদকে প্রশ্ন করেন ও মাকসুদের পৈতৃক বাড়িতে তুলে নেওয়ার দাবি জানান সুলতানা। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে তুলে নেওয়ার শর্ত হিসেবে মাকসুদ সুলতানাকে তার পৈতৃক উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকা মাকসুদের হাতে তুলে দেওয়ার চাপ দিতে থাকেন।

সুলতানা আরও উল্লেখ করেন, এক পর্যায়ে মাকসুদ স্ত্রী ও কন্যা সন্তানকে সুলতানার বাবার বাড়িতে ফেলে রেখে চলে যান ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অনেক চেষ্টার পরে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর মাকসুদকে তার কন্যার অসুস্থতার খবর পাঠিয়ে আসার অনুরোধ করলে তিনি শ্বশুরবাড়িতে এসে ফের সুলতানার উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বিক্রির চাপ দেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে সুলতানা ওই মাসের ১৪ অক্টোবর যৌতুক নিরোধ আইনে মাকসুদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

কিন্তু এই মামলায় জামিনে কারামুক্ত হয়ে গত ২১ এপ্রিল মাকসুদ তার কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রাত ১১টার দিকে সুলতানার পৈতৃক বাড়িতে আসেন ও মামলা তুলে নিতে হুমকি ধামকি দেন। সেই সঙ্গে উত্তরাধিকার সূত্রে সুলতানার প্রাপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকা ব্যবসার জন্য মাকসুদকে তুলে দিতে বলেন। মাকসুদের কথামতো সুলতানা রাজি হলেই তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে বাড়িতে তুলে নেওয়া হবে বলেও প্রলোভন দেখান। কিন্তু এসব শর্তে সুলতানা রাজি না হওয়ায় মাকসুদ সুলতানাকে খুন করার উদ্দেশ্যে তেড়ে আসেন। সুলতানার পিতা বাধা দিলে তাকেও লাথি দেন মাকসুদ। মাকসুদ-সুলতানার কন্যা শ্রাবন্তী মাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাকেও জখম করেন মাকসুদ। পরে সুলতানাকে বেদম মারধর করেন মাকসুদ। এ বিষয়ে আবার মামলা করলে ও যৌতুক না দিলে সুলতানাকে মেরে মাটিতে পুঁতে ফেলার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন মাকসুদ।

বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিকালে বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা উক্ত মামলাটিকে নির্বাচনে হয়রানি করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে বলে দাবি করে মাকসুদ হোসেনের জনপ্রিয়তা বিবেচনায় নিয়ে জামিনের আবেদন করেন। পরিপ্রেক্ষিতে বাদী পক্ষে আইনজীবীদের যুক্তিতে আদালতের বিচারক মাকসুদ হোসেনকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে উক্ত মামলাটি ছাড়াও আরো ৪টি মামলা চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভর বিরুদ্ধে পুলিশ পেটানো, ইউপি সদস্যকে অপহরণের পর হত্যার চেষ্টা, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মোট ৩টি মামলা চলমান রয়েছে।

যার মধ্যে, মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ভরণ পোষণ না দিয়ে নির্যাতন ও যৌতুক বিরোধ আইনের তিন ধারায় সিআর মামলা, পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৮৫ সালের (৫) ধারা বিধান মতে দেন মোহর ও খোরপোশ আদায়ের মোকাদ্দমা, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ১২, ১৫(১) টেবিল ধারায় সিআর মামলা রয়েছে।

মাকসুদ হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা, ধামগড় ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার সফরউদ্দিনকে হত্যা উদ্দেশ্যে তুলে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা, বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫(১) ধারায় মামলা রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রিবেট সুবিধাসহ পৌরকর পরিশোধ-ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের মেয়াদ বাড়ল

ডাক্তারদের হাতের লেখা ঠিক করতে বললেন আদালত

এ দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির : মুতাছিম বিল্লাহ

১০ ঘণ্টা পরেও স্বাভাবিক হয়নি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ভোগান্তি চরমে 

‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত জামিন সংক্রান্ত বক্তব্য আইজিপির নয়’

বান্ধবীর কাছে ‘হিরো’ হতে গিয়ে ৪২২৯ যাত্রী নিয়ে প্রমোদতরী ডুবিয়ে দেন ক্যাপ্টেন!

মায়ের পাশে ঘুমিয়ে ছিলেন যুবক‌, জানালা খুলে গুলি করে হত্যা

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ২০০

কী এই গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা, কেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু?

হিন্দু সম্প্রদায়কে দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা / প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের : তারেক রহমান

১০

স্বস্তি ফিরেছে খাগড়াছড়িতে, যান চলাচল শুরু

১১

দেশের প্রশ্নে কোনো বিভাজন নয় : ডিসি তানভীর

১২

বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিসিবি পরিচালক গায়ক আসিফ

১৩

বরিশালে ৩০ সনাতন ধর্মাবলম্বীর বিএনপিতে যোগদান

১৪

আমি একজন মাদ্রাসার ছাত্র হিসেবে গর্ব করি : ধর্ম উপদেষ্টা

১৫

আ.লীগ গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে : ডা. জাহিদ

১৬

আফগান সিরিজের আগে সুসংবাদ পেলেন একাধিক টাইগার ক্রিকেটার

১৭

সর্দার দুলালসহ আন্তঃজেলার ১৩ ডাকাত গ্রেপ্তার

১৮

হবিগঞ্জে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০

১৯

আ.লীগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে কী বললেন আইন উপদেষ্টা

২০
X