খুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৭ পিএম
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মাটি ছাড়া ঘাস উৎপাদনে সফল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা

মাটি ছাড়া ঘাস উৎপাদনে ব্যস্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ছবি : কালবেলা
মাটি ছাড়া ঘাস উৎপাদনে ব্যস্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ছবি : কালবেলা

মাটি ছাড়া চাষাবাদের মাধ্যমে গৃহপালিত পশুর খাদ্যের চাহিদা পূরণে ঘাস উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গবেষক দল। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত ঘাসকে ‘হাইড্রোপনিক ফডার’ বলা হয়। যা সাধারণ ঘাসের থেকে বেশি পুষ্টিকর। এই ঘাস উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন গবেষকরা।

গবেষণা প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী কেন্দ্রের অর্থায়নে এবং অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গৃহীত।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে এক কর্মশালার মাধ্যমে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষকরা।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে মাটি ছাড়া ঘাস উৎপাদন প্রাণিসম্পদের উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। বাংলাদেশের জনগণের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে প্রাণিসম্পদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতিতে গৃহপালিত পশুর জন্য ঘাস উৎপাদন করা যায়। এই ঘাস সাধারণ ঘাসের থেকে অনেক বেশি পুষ্টিকর।

সাধারণ ঘাসের তুলনায় হাইড্রোপনিক ফডারের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। যার মধ্যে অধিকতর ভিটামিন, খনিজ উপাদান, প্রাণীদের কাছে সুস্বাদু ও খুব সহজেই হজম হয়ে শরীরের পরিপাকতন্ত্র দ্বারা পুষ্টি উপাদান শোষিত হয়ে যাওয়া অন্যতম। সাধারণ ঘাসের তুলনায় এর মধ্যে থাকা বীজের জন্য আমিষের মাত্রা বেশি হয়।

গবেষণায় আরও উঠে আসে, হাইড্রোপনিক ফডারের অন্যতম সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধা হচ্ছে প্রতিকূল পরিবেশে এর ব্যবহারযোগ্যতা। বাংলাদেশ একটি জনবহুল ও দুর্যোগ-প্রবণ দেশ। বাংলাদেশে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের প্রভাবেও কৃষি জমি ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এমন অবস্থায় অল্প জায়গায় কোনো কৃষি জমি ছাড়াই ও নগরায়ণ, শিল্পায়ন, নদীভাঙন, অতিবৃষ্টি, মাটির অনুর্বরতা প্রভৃতি সমস্যা মোকাবিলা করে প্রাণী খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব এই উপায়ে। একই সঙ্গে দেশের নিরবচ্ছিন্ন প্রাণিজ আমিষের জোগান দিতে হাইড্রোপনিক ফডার হতে পারে একটি স্থিতিশীল সমাধান।

হাইড্রোপনিক পদ্ধতিটি পৃথিবীতে নতুন না হলেও এই প্রযুক্তির ব্যবহার বিরল। বাংলাদেশে খুব কম জায়গায় এই পদ্ধতির ব্যবহার করা হয় যদিও সঠিকভাবে ব্যবহার করলে প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র খামারি থেকে বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও লাভবান হতে পারবে।

গবেষণার বিষয়ে প্রধান গবেষক অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক সরদার শফিকুল ইসলাম জানান, সাধারণ ঘাসের তুলনায় হাইড্রোপনিক ফডারের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে- যার মধ্যে অধিকতর ভিটামিন, খনিজ উপাদান, প্রাণীদের কাছে সুস্বাদু ও খুব সহজেই হজম হয়ে শরীরের পরিপাকতন্ত্র দ্বারা পুষ্টি উপাদান শোষিত হয়ে যাওয়া অন্যতম। সাধারণ ঘাসের তুলনায় এর মধ্যে থাকা বীজের জন্য আমিষের মাত্রা বেশি হয়। এটি ৭ থেকে ১১ দিনে উৎপাদন করে ব্যবহার করা হয় বিধায় এতে আঁশ কম থাকে। ফলশ্রুতিতে এনার্জির পরিমাণেও সাধারণ ঘাসের তুলনায় বেশি হয়।

গবেষক আরও জানান, অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন এনজাইমের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। যা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ ইত্যাদি ভিটামিন সংশ্লেষণে সহায়তা করে এবং এটি গ্রহণে প্রাণী দেহে ভিটামিনের শোষণ এবং জৈব উপলভ্য বৃদ্ধি পায়।

এ গবেষণা প্রকল্পের সহকারী গবেষক ওই ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মো. মোসতাযাবুর রহমান জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণায় মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আবহাওয়ায় পাঁচ প্রজাতির বীজ ব্যবহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে এগুলোর ফলন, পুষ্টিগত উপাদান ও উৎপাদনের খরচ সম্পর্কে বিশদভাবে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এখানে দেখানো হয় ভুট্টা, গম, যব, সরগাম ঘাস ও বরবটির বীজ ব্যবহার করে কীভাবে খামারিরা প্রাণিসম্পদ বিকাশে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারবেন।

মোসতাযাবুর রহমান আরও জানান, এ গবেষণায় দেখানো হয়েছে পাঁচটি ক্ষেত্রেই প্রতিকূল পরিবেশে হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফডার তৈরি করা সম্ভব। খরচের দিক বিবেচনায় গমের হাইড্রোপনিক ফডারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে ফলনের দিক থেকে যব ও বরবটি অধিক সাফল্য দেখাতে সক্ষম বলে উল্লেখ করা হয়। গবেষণাটি বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘এলডিসি উত্তরণ ও বন্দর নিয়ে কেবল নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে’

দেশের ৮১ সরকারি কলেজ স্থান পেল ‘এ’ ক্যাটাগরিতে

স্ট্রোক করে চবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

চলন্ত ট্রেনে পপকর্ন বিক্রেতাকে হত্যা

আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড, গ্রেপ্তার ২৪

বস্তিবাসীর জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ও স্থায়ী পুনর্বাসনের আশ্বাস আমিনুল হকের

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে: সাকি

তিন মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি গ্রেপ্তার

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল ভারত

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে : ডা. শাহাবুদ্দিন

১০

‘যারা কাসেমীর ফাঁদে পড়েছ, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করো’

১১

ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য শক্তিশালী দল ঘোষণা বাংলাদেশের

১২

বৃহত্তর নোয়াখালী নারী কল্যাণ সংঘ ইতালির আত্মপ্রকাশ

১৩

শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের

১৪

‘হাসিনার কালো আইন বাতিল করুন, না হয় নিবন্ধন দিন’

১৫

বাড়ির পাশের পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

১৬

আহত শিশুকে নেওয়া হলো হাসপাতালে, সড়কে পড়ে ছিল বিচ্ছিন্ন হাত

১৭

বিএনপির দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৮

যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের ২ সদস্য বরখাস্ত

১৯

দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রাণ গেল ২ বন্ধুর

২০
X