এখনো অচলাবস্থা কাটেনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। দীর্ঘ আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার সপ্তম দিনেও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা।
কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা প্রশাসন। শিক্ষকদের লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৬ মে সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক সমিতির দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রশাসন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষকদের সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি ওই সহিংসতার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার কুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, ফাঁকা পড়ে আছে ক্লাসরুমগুলো। শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় নেই শিক্ষার্থীরাও। ধুলা জমেছে ক্লাসরুমের চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ ও মেঝেতে। ক্যাম্পাসের সড়কেও উপস্থিতি নেই শিক্ষার্থীদের। হলের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করছেন।
এদিকে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় প্রতিদিনই শিক্ষকদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এখনও কোনো লাভ হয়নি। শিক্ষকরা অনড় রয়েছেন তাদের দাবিতে। শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় বিপাকে পড়েছেন সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী। কুয়েটে আগে থেকেই প্রায় দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। এর ওপর গত আড়াই মাস কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। এ অবস্থা চলমান থাকায় বাড়ছে সেশনজট।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা ইতোমধ্যে একাধিকবার ভুলত্রুটির জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমরা চাই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই শিক্ষকদের কাছে যাচ্ছি। স্যারদের বলেছি, আমাদের যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের মাফ করে দিন। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশে অনিচ্ছাকৃত যে কোনো ভুলের জন্য আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। আমরাও ওই সময়ের ঘটনার বিচার চাই। স্যারদের সঙ্গে কোনো অন্যায় কেউ করলে সেটারও বিচার চাই। আমরা চাচ্ছি, বিচারপ্রক্রিয়া চলতে থাকুক, পাশাপাশি ক্লাসটাও চলুক। না হলে বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে হবে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষে আহত হয় শতাধিক শিক্ষার্থী। এরপর থেকে দেখা দেয় অচলাবস্থা। একপর্যায়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে উপাচার্য ও উপউপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক হজরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিন্ডিকেট সভায় গত রোববার থেকে আবার শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
৫ মে সাধারণ সভায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানান। এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুয়েট নিয়ে অপপ্রচারে যুক্ত পেজ, গ্রুপ ও ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে বন্ধসহ আইনিব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান তিনি।
জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক হযরত আলী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করেছেন। ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার পর থেকে শিক্ষক সমিতি প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, আমরা সাত কর্মদিবসের কথা বলেছিলাম। তবে আশা করছি, এর আগেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার বলেন, উপাচার্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সংকট নিরসনের জন্য চেষ্টা করছেন। পরিস্থিতি এখন শান্ত, তবে ক্লাস হচ্ছে না। শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের কোনো মুভমেন্ট নেই।
মন্তব্য করুন