

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গোপন নথি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপাচার্যের পিএস মো. মিজানুরের বিরুদ্ধে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) গভীর রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে নথিগুলো শেয়ার করার কিছুক্ষণের মধ্যই আবার স্টোরি থেকে ডিলেট করেন তিনি। এমন ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
তবে গোপন নথি এবং ছবি কীভাবে নিজের ফেসবুক আইডির স্টোরিতে গেল সে বিষয়টি অবগত নন বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিজানুর রহমান নিজের ফেসবুক স্টোরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০টি গোপন নথির ছবি শেয়ার করেন। ফেসবুক স্টোরিতে শেয়ার করা ফাইলগুলোর একাধিক স্ক্রিনশট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করার নথি, ব্যক্তিগত ফাইল, শাস্তির নথি, তদন্ত প্রতিবেদন, অডিট আপত্তির নথি এবং শিক্ষার্থীদের মামলার নথিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় ছবি রয়েছে। কর্মকর্তাদের চাকরির আবেদনপত্রের ব্যক্তিগত ছবিও স্টোরিতে শেয়ার করেছেন তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে।
তাছাড়া মিজানুর রহমানের ব্যক্তিগত ছবি, তার বিল্ডিংয়ের মালিকানা সম্পর্কিত নথিসহ তার ছেলেমেয়েদের জন্মনিবন্ধনের ছবিও স্টোরিতে শেয়ার করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা যাদের গোপন নথি শেয়ার করা হয়েছে তারা সবাই মিজানুর রহমানের বিরোধী শিবিরের লোক বলে দাবি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সেকশন অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, বিশ্বব্যিালয়ের উপাচার্যের কাছে অবহিতকরণের জন্য আমি একটি আবেদনপত্র দিয়েছিলাম। সেই আবেদনপত্রের ছবিসহ একাধিক গোপনীয় নথি ছড়িয়েছেন ভিসি দপ্তরের এক কর্মকর্তা। বিষয়টি দুঃখজনক ও হুমকিস্বরূপ।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব গোপনীয় ফাইল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া গুরুতর অপরাধ। এটি নিয়ে সবাই আলোচনা-সমালোচনা করছেন। আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টির যৌক্তিক একটা সুরাহা করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ভিসির পিএস মিজান এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব গোপন নথির ছবি তুলে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করতেন। কর্মকর্তাদের মধ্যে তার বিপরীত গ্রুপের যাবতীয় ব্যক্তিগত গোপনীয় এসব ফাইল তিনি দীর্ঘদিন ধরে পাচার করে আসছেন। আমরা আশাকরি কর্তৃপক্ষ দ্রুতই এবিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষরে ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, বিশ্বব্যিালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারে গোপনীয় এসব ফাইলের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া বড় ধরনের একটি শৃঙ্খলাভঙ্গ অপরাধ। আইনানুযায়ী বিশ্বব্যিালয় কর্তৃপক্ষকে যথাযথ বিচার করতে হবে। নয়তো ভবিষ্যতে এর চেয়েও বড় ধরনের অঘটনের সম্মুখীন হতে হবে।
তবে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন- অভিযুক্ত মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, কীভাবে গোপন এসব নথি- ছবিগুলো আমার ফেসবুক স্টোরিতে শেয়ার হলো আমি নিজেই বুঝে উঠতে পারছি না।
তবে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম। তিনি বলেন, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা দুঃখজনক। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন উপাচার্য।
মন্তব্য করুন