বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে পাঠ্যবই ছাপার কাজ দেওয়া হলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক উইং। দেশীয় স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি খাতকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে একটি গোষ্ঠী যড়যন্ত্র করছে। এখন এটা থামাতে হবে। না হলে এ সেক্টরে কর্মরত কয়েক লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হবে বলে জানান শ্রমিক নেতারা।
রোববার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিলে এনসিটিবি কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে সংগঠনটি এই হুঁশিয়ারি দেয়। মানববন্ধনে নেতাকর্মীরা বিদেশি ছাপা চাই না, দুনিয়ায় মজদুর এক হও লড়াই করো, বিদেশি কালো হাত ভেঙে দাও সহ নানা স্লোগান দেন।
শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় নেতা হাসান বলেন, দেশীয় স্বয়ং সম্পূর্ণ একটি খাতকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে যড়যন্ত্র করছে একটি গোষ্ঠী। এটা থামাতে হবে। কারণ এ সেক্টরে দেশে লাখ লাখ শ্রমিক জড়িত। বিদেশিদের হাতে কাজ গেলে তারা বেকার হবে। দেশের কাজ দেশেই রাখতে হবে
সংগঠনের নেতা মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের দেশে দক্ষ জনবল রয়েছে। তবু বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। শ্রমিকের রুটি-রুজির হক অন্যের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে নামা হবে এবং এনসিটিবির সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের মুখ্য সংগঠক শিপন বলেন, রাষ্ট্রের সংবিধান পরিবর্তন করে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ বিভিন্ন শ্রমিক নেতা ও ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। আগে সংস্কার, তারপর নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এই সরকার যদি আমাদের কথা না শোনে তাহলে বুঝতে হবে বিদেশিদের হাতে কাজ দিয়ে আবার বড় অঙ্ক পাচার করা হবে।
এদিকে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বানের খবরকে ভিত্তিহীন দাবি করেছে এনসিটিবি। সংস্থাটির সচিব প্রফেসর মো. সাহতাব উদ্দিনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে—এ তথ্য সঠিক নয়। বিভ্রান্তি এড়াতে সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সরকারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুষ্ঠিত ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে পাঠ্যবই ছাপাতে আন্তর্জাতিক দরপত্র দিতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) ২০০৮-এর বিধি ৮৩(১)(ক) কিছুটা সংশোধন করা হয়। পিপিআর-এর ৮৩(১)(ক) অনুযায়ী আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির ক্ষেত্রে দরপত্র প্রস্তুত ও দাখিলের জন্য বিজ্ঞাপনের তারিখ থেকে কমপক্ষে ৪২ দিন সময় দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজন বা দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে এ সময়সীমা কমানোর সুযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার সেই বিধিতে সংশোধিত প্রস্তাব পাস করেছে ক্রয় কমিটি। এর মাধ্যমে দরপত্রে সময়সীমা ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিনে নামিয়ে আনা হলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক দরপত্র যাওয়ার জন্যই সরকার বিধিতে এই পরিবর্তন এনেছে। যদিও এ বিষয়ে অফিসিয়ালি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
মন্তব্য করুন